গল্প: নেকড়েঁ মানব
ক্যাটাগরী: থ্রিলার+গোয়েন্দা
পর্ব:4
মূল ফটক পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল পিন্জ। সারা বাড়ি অন্ধকার আর ভ্যাপসা টাইপের একটা গন্ধ ভেসে আসছে। বুঝতে পারল এটা রক্তের পচা গন্ধ। ক্রাইম স্পট এখনো পরিষ্কার করা হয়নি।
" বাতি অন করো জেসন!" বলল পিন্জ।
পকেট থেকে হ্যান্ড গ্লাভস বের করে ভিকটিমের বেড রুমে গেলো পিন্জ। মোটামুটি আগেও সার্চ করেছে। আবারো রি-সার্চ করতে হবে। কফির কাপটা যেখানে পড়েছিলো সেখান থেকে তুলে টেবিলে রাখলো পিন্জ।
বেডের তলা চেক করা হলো। কিছু উটকো টাইপের গন্ধ ছাড়া কিছূই পেলো না। শরীরের অংশগুলো ছিটকে যাওয়ায় এদিক সেদিক পড়েছে। যার কিছু অংশ হয়তো খাটের তলায় পড়েছে আর সেটা হতেই এই উটকো টাইপের গন্ধটি ভেসে আসছে।
" জেসন? একটু গরম পানি আনতে পারবা? "
প্রশ্ন করল পিন্জ।
" জ্বী স্যার। একটু অপেক্ষা করুন!"
খানিকবাদে জেসন গরম পানি করে আনলো।
" পানি টুকু খাটের তলায় ঢালো!"( পিন্জ)
পানি ঢালার পর গন্ধটা যেমন একটু কমেছে। আবার সার্চের কাজে মন দিলেন পিন্জ। আলমারি, ড্রয়ার সব গোছানোই আছে। তবে, দরজার কাছ থেকে কিছু পশম পেলেন। মনে হচ্ছে এটা কোনো প্রানীর পশম।
মোটামুটি ভাবে সমস্ত বাড়িই তল্লাশি করলেন। তবে, তেমন নতুন কোনো ক্লু পেলেননা। সেই আগের মতোই কিছুটা তথ্য। জানালার ভিতর দিয়ে খুনিটা ঢুকেছিলো আর হত্যা করার পর সেখান থেকেই বাড়ির বাহিরে চলে গেলো । শুধুমাত্র ভিকটিমের বাড়ির সি সি টিভি ও এলাকার ফুটেজ থেকে এটা জানা গেলো কিছু একটা রহস্য বিরাজমান।
ক্রাইম প্লেস থেকে যাবতীয় তথ্য এনে তার উপর ভিত্তি করে একটি ফাইল বানিয়ে মি.রুট এর টেবিলের উপর রাখলেন পিন্জ।
" স্যার। প্রথম ভিকটিমের বাড়ি থেকে যা পেয়েছি তার সব তথ্য এই ফাইলে রয়েছে।"
সম্মানের সহিত মি.রুট এর টেবিল এর সামনে কিছুটা ফর্মাল ভঙ্গিতে কথাটি বলল পিন্জ।
" গুড! ভেরি গুড। তো প্যাটার্ন অনুযায়ী তো আজকেও খুন হবে। "
" জ্বী স্যার। বাট আমরা জানি না খুনটা এক্সেটলি কোথায় হবে। "
" এটাই ভাববার বিষয়। আমরা তো ঠিকমতো ব্যাবস্থাও নিতে পারছি না এটার জন্য।"
" জ্বী স্যার "
" তুমি আজ রাতে সমস্ত টিমকে এলার্ট করে দাও। যাতে সবাই চারদিকে সতর্ক থাকে।"
" ইয়েস স্যার।"
মি.রুট এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিস থেকে চলে গেলেন পিন্জ । দায়িত্ব বুজিয়ে এলাকার সমস্ত মেইন পয়েন্টে টিম রেডি করা পিন্জ এর। তার সাথে প্রতিটি ব্লকের শুরু ও শেষ পয়েন্টে পুলিশ ফোর্স রেডি করা। লক্ষ্য আজ রাতেই ধরতে হবে খুনিকে।
চারদিকে নিস্তব্ধ অন্ধকার। জনমানবের কোনো চিহ্ন নেই বলা যায়। এমন একটা পরিবেশে ভয় পেলেও নিজেকে সামলিয়ে ধরে রেখেছে পিন্জ। লক্ষ কোনো মতেই খুনিকে ছাড়া যাবে না। জঙ্গলের একেবারে ফ্রন্ট গেইটে দাড়িয়ে আছে পিন্জ। হাতে একটি P90 এর একটা বন্দুক। আর একটা ওয়াকিটকি। ঘড়িতে রাত 2 বাজে। হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভেঙে মিস্টার রুট এর ভয়েস ভেসে আসল ওয়াকিটকিতে।
" হ্যালো পিন্জ? ক্যান ইউ হেয়ার মি?"
" ইয়েস স্যার। কিছু হয়েছে?"
" তুমি তাড়াতাড়ি মি.লোটফাসের বাড়ি আসো।"
" কোন লোটফাস? "
" এলাকার বড় ব্যাবসায়ি।"
" জ্বী স্যার চিনেছি আসতেছি "
ঘন্টাখানিক বাদে পিন্জ পৌছালো এলাকার বিখ্যাত ব্যাবসায়ি লোটফাসের বাড়িতে। সবার চোখে তিনি ডায়মন্ড এর ব্যাবসায়ী হলেও তার আড়ালে চলে স্মাগলিং, হিউম্যান ট্রাফিকিং ইত্যাদি। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমানের অভাবে কিছুই করতে পারছেননা আইনের লোক। চেয়ারের উপর বসে আছেন মি.রুট। পাশে কপালে হাত দিয়ে বসে আছেন মি.রুট। পাশে দাড়িয়ে তার স্ত্রী। বাড়ির বাহিরে ফোর্স দাড় করানো। নিশ্চই তাহলে কিছু হয়েছে।
" স্যার! আই এম হেয়ার!" সকলের নিস্তব্ধতা ভেদ করে কথাটি মি.রুট কে বলল পিন্জ।
" পিন্জ। মি.লোটফাসের ছেলে নিখোজঁ হয়েছে আজ রাত 12 টার দিকে।"
" কীভাবে? "
" উনারা বলল রাত 12 টার সময় লোটফাসের স্ত্রী ছেলেকে দেখতে গিয়েছিলো ঘুমিয়েছে কিনা এর পর তিনি রুমে ঢুকে তার ছেলেকে পাননি। বেড রুম সব তচনছ করা। "
" আচ্ছা স্যার।"
" ওনারা ধারনা করছেন হয় এটা কিডন্যাপিং নয় নেকড়েঁ মানবের কাজ। যেটা এলাকার সবাই আপাতত ধারনা করছে।"
" তাহলে তো তাকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব না বলে মনে হয়।"
পিন্জের কথাটি শোনার পর মি.লোটফাস চেয়ার ছেড়ে ক্ষেপান্তিত চোখে পিন্জের দিকে তেড়ে আসলেন ।
" এই কী বললে তুমি?" ( লোটফাস)
" সরি স্যার। "( পিন্জ)
" স্যার শান্ত হোন। তবে,এটা যদি নেকড়েঁ মানবের কাজ হয় তাহলে এটাই সত্য । আর, পিন্জ তুমি বাদ দাও। দেখছো না ওনার ছেলেটা নিখোজঁ হয়েছেন ।"( মি.রুট)
" সরি স্যার!"( পিন্জ)
" মি.রূট যে করেই হোক আমার ছেলেকে আমি চাই।"
" জ্বী স্যার আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।"
" হুম। দরকার পড়লে আরো লোক লাগাও তবুও আমার ছেলেকে চাই। যত টাকা লাগে দিবো।"
মি.লোটফাসকে বিদায় দিয়ে অফিসে যাওয়ার রওনা দিলেন পিন্জ ও রুট। তাদের ফ্যামিলি ড্রামা দেখতে দেখতে প্রায় সকাল ৬ টা বাজতে চলল। গাড়িতে যেতে যেতে,
" কী মনে হয়? পিন্জ! যেই কাজটা করুক আদৌও ঠিক করেছে?"
" আমি তো অনেক খুশি স্যার। শুনেছি ওর পাশাপাশি ওর ছেলেও কালো টাকার পাহাড় বানিয়েছে শুধুমাত্র স্মাগলিং ও হিউম্যান ট্রাফিকিং করে।"
" হুম সেটাই। তবে, আমাদের তো আর বসে থাকলেও চলবে না। খুজেঁ বের করতে হবে।"
" জ্বী স্যার। তবে আমার ইচ্ছা, ওর ছেলেটাকে যদি আমি নিজ হাতে মারতাম! জানেন স্যার কলেজ লাইফে আমার বান্ধবীর মুখে এসিড দিয়েছিলো এই জানোয়ারটা।"
" সে কী, কী বলো?
" জ্বী স্যার এটাই সত্য!"
" আইনি ব্যাবস্থা নাও নি?"
" কীভাবে নিবো বলেন? ছেলের বাপের টাকা জানেনই তো । কিছু ঘুষখোর পুলিশদের টাকা খাইয়ে সব প্রমান ধামাচাপা দিয়ে দেয়।"
" আশা করি। তোমার এই আশাটা যেন পুড়ন হয়। "
" সে কী আর হবে। ঐ মারাত্মক নেকড়ে মানব তো মনে হয় এতক্ষণে ছেলেটাকে মেরেই ফেলেছে।"
" তাও ঠিক।"
" আচ্ছা স্যার? ছেলেটাকে বাসাতে মারল না কেন? ধরে নেওয়ার কী মানে হলো?"
" সেটাতো আমি জানি না । হয়তো তোমাকে গিফট করবে আর বলবে, নাও পিন্জ এটাকে নিজে হাতে মারো।"
" আপনিও না স্যার। কীযে বলেন।"
" হা হা!"
কথা বলতে বলতে কোন সময় যে অফিসের কাছে চলে এলো খেয়ালই করলেননা কেউ।
অবশেষে গাড়ি এসে থামল তাদের অফিসের সামনে।
চলবে,
~আশিকুর রহমান
0 Comments