----"ম্যাজিক বুক"---
 ----"প্রথম পর্ব"-----
 লেখক: সৌরভ ইসলাম

- 'কি ব্যাপার ড্রাইভার গাড়ী থামালে কেনো?'
- 'স্যার, সামনে তাকিয়ে দেখুন।'

আশিক সাহেব সামনে তাকিয়ে দেখলেন, একটা বটগাছের ডাল রাস্তার ওপর দিয়ে; রাস্তার আরেকপাশে চলে গেছে।
তারওপর ক্রমাগত তিনটি সাদা কাফন পড়া লাশ ঝুলছে।
লাশ গুলোর চোখ খোলা। চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। মনে হচ্ছে গাড়ীর দিকে ভয়ার্ত চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে।
আশিক সাহেব ও ড্রাইভার এমন দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে গেলেন।

তারা একদম চুপ করে রইলেন। যেনো কোনভাবেই পিছনের ছিটে বসা আশিক সাহেবের ফ্যামিলির কেউ বিষয়টি বুঝতে না পারে।
অবশ্য তারা ঘুমিয়ে আছে, যার দরুন কিছুই বুঝতে পারবেনা।

হঠাৎ তিন লাশের মাঝের লাশটা রশি ছিঁড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
এমন দৃশ্য দেখে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।
আশিক সাহেব এবং ড্রাইভার ভয়ে একে অপরের দিকে তাকালেন।
আশিক সাহেব ড্রাইভারকে চটজলদি গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলতে বললেন।

ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে আবারও হাইওয়ের দিকে যেতে লাগলো।
খুব শীঘ্রই কাঁচা রাস্তা ছেড়ে হাইওয়েতে উঠে গেলেন তারা।

'আশিক সাহেব হলেন, একজন সরকারি চাকরিজীবী।
বিভিন্ন জায়গায় ট্রান্সফার হতে হয় তাকে।
এবার তার ট্রান্সফার হয়েছে শেরপুরে।
ভারতের বর্ডারের কাছেই।
চারদিকে শুধু ঘণ জঙ্গল।
জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে পৌঁছাতে সময় লাগে আধা ঘণ্টা।

জঙ্গলের ভিতরে সুন্দর একটি পাঁচ তলা ভবন নিয়েছেন থাকার জন্য।
অনেকদিন থেকেই পরিত্যাক্ত ভবনটি।
চারপাশে কোনো বাড়িঘর নেই।
তবে কিছুদূরেই রয়েছে পাহাড়ি গারো আদিবাসীর বসতি।

রাস্তা শর্টকাট করার জন্য জঙ্গলের মাঝ দিয়ে কাঁচা রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন তারা।
তবে ড্রাইভার বুঝে ওঠতে পারেনি যে, রাস্তার মাঝে এমন ঝুলন্ত লাশ দেখতে হবে।

 লোকমুখে শোনা যায়, এই পাহাড়ি রাস্তাগুলোতে নাকি অনেক ভূত, প্রেতাত্মা রয়েছে। যাইহোক তারা আর রাস্তা খাটো না করে মেইন রোড দিয়ে যেতে লাগলেন।
গাড়ি শা শা শব্দ করে ছুটে চলেছে।
সেই সাথে আকাশের চাঁদটি ঢাকা পড়ে গেলো কালো মেঘের আড়ালে।
শুরু হয়ে গেলো ঝুম বৃষ্টি।

বৃষ্টি তার নিজস্ব ছন্দ নিয়ে ঝরে পড়তে লাগলো ধরনীর বুকে।
বৃষ্টির আওয়াজ শুনে পাশের ছিটে বসা, আশিক সাহেবের বউ এবং তার পরিবারের বাকি সদস্যদের ঘুম ভেঙে গেলো।

আশিক সাহেবের যমজ দুই ছেলে, সৌরভ ও শাহীন।
তার একটি মেয়েও রয়েছে যার নাম জেরিন।
জেরিন, সৌরভ এবং শাহীনের চেয়ে দুই বছরের বড়।

শাহীন আর জেরিন সবসময় ঝগড়া আর মারামারি নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
দুজনের কেউই কাউকে দেখতে পারে না।
একে অপরের জাত শত্রু।
কিন্তু সৌরভ মোটেও মারামারি পছন্দ করে না। সে খুব শান্তশিষ্ট।

"পৌছাতে আর কতক্ষণ সময় লাগবে? জানতে চাইলো আশিক সাহেবের স্ত্রী শেলি চৌধুরী।"

"এই তো আর মাত্র আধাঘন্টা সময় লাগবে। জবাব দিলেন আশিক সাহেব।"

গাড়ী ছুটছে তো ছুটছেই। সকলের চোখে রাজ্যের ঘুম ভর করে রেখেছে।
হঠাৎ ড্রাইভার গাড়ীর ব্রেক কষলেন।
আচমকা ব্রেক করার কারণে সবাই সামনের দিকে হুমড়ি খেলেন।

আশিক সাহেব ড্রাইভার কে গালাগাল দিতে গিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলেন, বড়সড় একটা ষাঁড় দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার মাঝ বরাবর।
সবাই এই দৃশ্য দেখে কিছুটা ভয় গেল।
এই ঝুম বৃষ্টির মাঝেও তাদের শরীরে ঘামের ছাপ স্পষ্ট।
ড্রাইভার ককয়েকবার হর্ন বাজালেন।
কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো না।
ড্রাইভার ষাঁড়টাকে উদ্দ্যেশ্য করে গাড়ি স্টার্ট করলো।

গাড়ী ছুটতে লাগলো ষাঁড়ের দিকে।
কাছে যেতেই ষাঁড় পাশ কাটিয়ে গেলো।
কিন্তু ষাঁড় আর গাড়ীর সামান্য সংঘর্ষ হয়ে যায়।
যার ফলে গাড়ীর হেডলাইন ভেঙে যায়।

সবাই যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
সবাই নিশ্চিত আপদটা দূর হয়েছে।
কিন্তু বৃষ্টি পড়ার শব্দের সাথে অন্য কিছুর দৌড়ে আসার আওয়াজ সবার কর্ণপাত হতে লাগলো।

সেই ষাঁড়টি আবার পিছু নিলো না তো?
কি জানি, নিতেও পারে।
সবাই ভয়ে চুপসে রয়েছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের গন্তব্যের নিকটে এসে গেলো।
এখন বৃষ্টি অনেকটায় কমে গেছে।
গাড়ী থামলো এক বিশাল পাঁচ তলা ভবনের সামনে।
বাড়ির সামনে কয়েক সেন্টিমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে ফুলের বাগান।
তার এক পাশে রয়েছে কাজলা দিঘি।

গাড়ীর সামনে ছুটে আসলেন, বাড়ীর কেয়ার টেকার মোতালেব মিয়া।
তিনি সবাইকে সাচ্ছন্দ্যে অভিবাদন জানালেন।
তারপর গাড়ী থেকে সমস্ত লাগেজ বাড়ীর ভিতরে নিয়ে গেলেন।

সবাই খুশি এমন নির্জন জায়গায় এত সুন্দর একটি বাড়ী পেয়ে।
খুব রোমাঞ্চকর জায়গা।

আশিক সাহেব ছেলে মেয়েদের রাস্তায় ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করলেন।
তিনি বুঝালেন ভূত বলতে কিছুই নেই।

তারপর খাওয়া দাওয়া সেরে তিন ভাই বোন ছাদে গেলো আড্ডা দেওয়ার জন্য।

"আমি নিশ্চিত এখানে ভূত রয়েছে।" শাহীন বললো।

"হুম, আর সেই ভূত তোর ঘাড় মটকাবে গাধা কোথাকার।" জেরিন জবাব দিলো।

শাহীন কথা শুনে কপট রাগ দেখিয়ে জেরিনের দিকে তেড়ে গেলো।
শুরু হয়ে গেলো টম অ্যান্ড জেরির ফাইট।

সৌরভ দুজনকে ছাড়িয়ে দিলো।
আর শাহীনকে ছাঁদ থেকে তাড়িয়ে দিলো।
আর সেখানে তারা কফি পান করতে করতে আড্ডা জমিয়ে দিলো। তাদের আড্ডায় শামিল হলেন কেয়ার টেকার মোতালেব মিয়া।
তিনি তাদের এখানে ঘটে যাওয়া ভূতের গল্প শোনাতে লাগলেন।
তারা ভয় না পেয়ে উপভোগ করতে লাগলো।

এদিকে,
 শাহীন একটি বল নিয়ে দেয়ালের দিকে ছুঁড়ে মারলো।
সাথে সাথেই কেমন যেনো আওয়াজ হলো।
মনে হলো ভিতরে ফাঁকা জায়গা রয়েছে।
সে একটি হ্যামার দিয়ে দেয়ালে আঘাত করলো। সাথে সাথেই ভেঙে গিয়ে একটি ফাঁকা জায়গা বের হলো।

ফাঁকা জায়গায় কাঠের তৈরি একটি লিফট রয়েছে।
যেটাতে রশি বাঁধা। রশি ধরে টান দিতেই লিফট তাকে উপরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।

একটি বদ্ধ ঘরের সামনে এসে লিফট থামলো।
সে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
একটি ছোট্ট লাইব্রেরি দেখতে পেলো।
সেখানে অসংখ্য বই রাখা।

একটি বই তার নজর কাড়লো।
বইটির নাম লিখা ম্যাজিক বুক।
গ্রন্থকার স্যামুয়েল উইজ।

বইয়ের উপরে ছোট্ট লক সিস্টেম।
সে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লকের উপর চাপ দিলো।
লক খুলে গেলো।
সাথে সাথে ঘর কাঁপতে লাগলো।
হঠাৎ তার মাথায় কোনো কিছুর আঘাত অনুভব করলো।
পেছন ঘুরতেই দেখে, ছোট্ট একটি ইঁদুরের মতো প্রাণী, কিন্তু মুখটা মানুষের মতো।
তার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে।
চলবে...