------"ম্যাজিক বুক"------
-----"নবম পর্ব"---------

মৃত্যুর ভয় সবার মনে জেঁকে বসেছে।
কক্ষের ভিতরে অন্ধকার আরও গাঢ় হতে লাগল। সেই সাথে হাওয়ার ভেপসা গন্ধের তীব্রতা আরো বেড়ে গেলো। পরিস্থিতি এতটাই বিদঘুটে, এই বুঝি গন্ধে তাদের নাড়িভুঁড়ি সব বেড়িয়ে আসবে।

সৌরভ শাহীনের উদ্দ্যেশ্যে বলতে লাগল,
"কফিন থেকে যদি মমি সব বেড়িয়ে আসে তবে? আমাদের উপায় কি হবে?  নিশ্চিত মৃত্যু নয় কি?"

-"আমার যতদূর মনে হয়। মমিরা সহজে বের হবেনা। অথবা তাদের বের হতে যথেষ্ট  সময় লাগবে। এই সুযোগে আমাদের বইটি খুঁজে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে হবে।"

-"কিন্তু আমরা তো বইয়ের নির্দিষ্ট অবস্থান জানি না। কোথায় খুঁজবো?"

তাদের কথোপকথন শুনে শ্রেয়া বলতে লাগল, "আমাদের কাছে তো নকশা রয়েছে। নকশাটা বের করো। আমি হলফ করে বলতে পারি নকশাতে 'সোলেমানি জাদুর কিতাব' সমন্ধে নিশ্চয় কোনো নিদর্শন রয়েছে।"

"তারাতাড়ি বের করো শাহীন। কফিনে থাকা মমিদের আওয়াজ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। তারা কফিনের ভেতর দুপদাপ আওয়াজ করছে।" বলল সৌরভ।

শাহীন বিন্দুমাত্র সময় অপচয় না করে চটজলদি নকশাটি বের করলো।
অতঃপর তিনজন মিলে নকশাটি খুঁতিয়ে দেখতে লাগলো।
হঠাৎ সকলের দৃষ্টি স্থির হলো প্লাস চিহ্নের দিকে।
অর্থাৎ নকশার শেষে একটি প্লাস চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে।

তাদের মধ্য থেকে শাহীন বলে উঠলো, "আমার মনে হয় প্লাস চিহ্ন দ্বারা বইয়ের অবস্থান বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যে কফিনটিতে প্লাস চিহ্ন রয়েছে, সেই কফিনের ভেতরে নিশ্চিত সেই বই সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে।"

সবাই শাহীনের কথার সাথে সহমত পোষণ করলো।
অতঃপর সবাই টর্চ নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে প্লাস চিহ্নযুক্ত কফিন খুঁজতে লাগলো। কারণ কক্ষে কমপক্ষে দুইশো এর বেশি কফিন রয়েছে।

সবাই হন্যে হয়ে খুঁজছে সেই প্লাস চিহ্নযুক্ত কফিন।
সৌরভ ডাক দিয়ে বলল, "তোমরা কি সেই কফিনটা পেলে?"

-"নাহ! আপাতত খুঁজে পাইনি।" জবাব দিলো শ্রেয়া।

হঠাৎ শ্রেয়া চিৎকার করে উঠলো।

তার চিৎকার শুনে শাহীন বলল,"কি হয়েছে? কোনো সমস্যা কি?"

"আমার পা ঢুকে গেছে একটা কফিনের ভেতর। আমি কিছুতেই বের করতে পারছি না।" বলেই আবারও চিৎকার করে উঠলো শ্রেয়া।

"ভয় পেয়ো না, আমি আসছি।" বলেই শ্রেয়ার কাছে দৌড়ে গেলো শাহীন।

গিয়ে দেখে একটা কফিনে শ্রেয়ার পা ঢুকে গেছে। শাহীন শ্রেয়ার পা ধরে কয়েকবার উপরের দিকে টান দিল। কিন্তু কিছুতেই যেনো বেড় হচ্ছে না শ্রেয়ার পা।
এমন পরিস্থিতিতে সৌরভও সেখানে গেলো।
তারপর দুজন মিলে টান দিল। তবুও কোনো ফলাফল আসলো না। মনে হচ্ছে ভেতর থেকে কেউ তার পা টেনে ধরেছে।

"আমার পা মনে হয় কেটে যাচ্ছে। প্রচুর ব্যথা পাচ্ছি। জলদি কিছু করো তোমরা।" কেঁদে কেঁদে বললো শ্রেয়া।

শাহীন আশেপাশে চোখ বুলাতেই দেখল, একটি পাথর পড়ে রয়েছে।
অতঃপর সৌরভ আর শাহীন মিলে পাথরটি নিয়ে কফিনের উপর আঘাত করলো।
বার কয়েক আঘাত করায় কফিন ভেঙে গেলো।
শ্রেয়ার পা বেড়িয়ে আসলো।
তারা দেখল কফিনের ভেতর একটি মমি শুয়ে রয়েছে। যেটি ভেতর থেকে শ্রেয়ার পা ধরে রেখেছিলো।
ধরে রেখেছিলো বললে ভুল হবে। তার পায়ে মমিটি হাতের নোখ দিয়ে আঁচড় কাটছিলো।
যার ফলে পায়ের কয়েক জায়গায় কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।

এবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে মমিটি এক লাফে দাঁড়িয়ে গেলো।
চোখ দুটি থেকে নীলাভ রংয়ের আলো ছড়াচ্ছে।
সেই সাথে তার শরীর থেকে বিশ্রী মানুষ পঁচা উটকো গন্ধ বের হচ্ছে।

সর্বপ্রথম মমিটি গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো শ্রেয়ার উপর।
শাহীন পেছন থেকে মমির ঘাড়ে কয়েকটি ঘুষি বসিয়ে দিল।
যার ফলে শ্রেয়াকে ছেড়ে দিয়ে মমিটি ঘুরে দাঁড়ালো।

রাগত্ব দৃষ্টিতে শাহীনের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মুখ থেকে হরহর শব্দ বের হচ্ছে।
তারপর ঝাপিয়ে পড়লো শাহীনের উপর।
শাহীন মুষ্টিবদ্ধ করে ঘুষি দিতে লাগলো।
কিন্তু মমির শরীর একদম নরম হয়ে আছে। ঘুষি দেওয়া মাত্র তার হাত ডেবে যাচ্ছে।
একসময় মমিটি শাহীনের ঘাড়ে তার দাঁত বসিয়ে দিল।
শাহীনও উল্টো মমির ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে দিল। কি বিশ্রী নোনতা স্বাদ। মনে হচ্ছে শাহীনের পেট ফুলে যাবে।
তবুও শক্তির জোরে কামড় দিতে লাগলো।
এক পর্যায়ে মমিটি শাহীনকে দূরে ছুড়ে মারল।

সুযোগ বুঝে সৌরভ এবং শ্রেয়া মমিটির মাথায় সেই পাথর দ্বারা আঘাত করলো।
ফলে থেঁতলে গেলো মমির মাথা।
তার শরীর নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলো।

চারদিক থেকে মন্ত্র ধ্বনির মতো মমিদের মুখের গড়গড় আওয়াজ আসছে।
এবার সবাই একসাথে খুঁজতে লাগলো সেই প্লাস চিহ্ন যুক্ত কফিন।

সবাই খুঁজে চলেছে।
হঠাৎ সৌরভ সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল, "একটি জিনিস খেয়াল করেছ?"

-"কি জিনিস?" জানতে চাইলো বাকি দুজন।

-" একটি কফিন থেকে কোনো আওয়াজ আসছে না। অনান্য কফিনের চেয়ে নিস্তব্ধ। আমার মনে হয় সেটিই সেই বিশেষ কফিন।" বলল সৌরভ।

"কোন কফিন সেটা?" জানতে চাইলো তারা।

অতঃপর সৌরভ তাদের সেই নিস্তব্ধ কফিনের কাছে নিয়ে গেলো।

সত্যি সত্যিই সেই কফিন থেকে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।

শ্রেয়া বলতে লাগল, "কিন্তু এই কফিনের ভেতর তো নকশা অনুযায়ী কোনো প্লাস চিহ্ন নেই। কিভাবে বুঝব এটাই সেই কফিন?"

-"নকশায় তো আর উল্লেখিত নয় যে, কফিনের উপরে প্লাস চিহ্ন থাকবে। চিহ্নটি তো ভেতরেও থাকতে পারে।" বলল সৌরভ।

অগত্যা বাধ্য হয়ে শাহীন সেই কফিনটি খুললো।
তারা দেখল, এই কফিনের মমির মুখটি বেঁধে রাখা হয়েছে।

-"কই? কোথাও তো সোলেমানি জাদুর কিতাবের কোনো নমুনা দেখা যাচ্ছে না।" বলল শাহীন।

-"আমার মনে হয় মমির নিচে একবার দেখা উচিত।" উৎসুকভাব বলল সৌরভ।

তারপর শাহীন,সৌরভ এবং শ্রেয়া মিলে মমিটিকে তুলে কফিনের বাহিরে রাখল।
মমি একদম নিস্তব্ধ কোনো নড়াচড়া;শব্দ নেই।

কফিনের ভেতরে দেখল, প্লাস চিহ্নযুক্ত চারকোনা একটি বক্স রাখা রয়েছে।
শাহীন সেটি হাতে নিলো।

সৌরভ বলল,"আমি বলেছিলাম না এটার ভেতরেই সেই বই রয়েছে।"
সবাই খুব খুশি হলো তার কথায়।

শাহীন আনন্দসহকারে বাক্সটির তালা ভাঙলো।
তালা খুলে সবাই বিশ্মিত হয়ে গেলো।
কারণ সোলেমানি জাদুর কিতাবের পরিবর্তে একটি নীল পাথর পড়ে রয়েছে। যেটি থেকে নীল রং সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।

-"এটা কি? সেই বই কোথায়?" প্রশ্ন করলো শ্রেয়া।

-"আমার মনে হয়, মমির শরীরের কোথাও সেই বই লুকিয়ে রাখা হয়েছে।" বিজ্ঞদের মতো বলল সৌরভ।

-"তাহলে তুই মমির ভেতর থেকে খুঁজে বের কর।" কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বলল শাহীন।

-"ওকে, তাহলে আমিই দেখছি।" বলেই সৌরভ মমিটির কাছে গেলো।

-"সর্বপ্রথম আগে মুখের পট্টি খুলে দেখি কার মমি এটা।"

"এটা তোর শ্বশুর এর মমি।" রেগে বলল শাহীন।

সৌরভ তার কথায় কান না দিয়ে মুখের পট্টি খুলতে লাগল।
মুখের পট্টি খোলামাত্র সবাই ভিষণ রকমের অবাক। কারণ এই মমির ব্যক্তিটি তাদের চেনা। সেটি আর কেউ নয়। তাদের পরিচিত স্যামুয়েল উইজ এর মমি।

সবাই অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আর ভাবছে এটা কিভাবে সম্ভব।

হঠাৎ স্যামুয়েল উইজ এর মমি চোখ খুলল।
আর তার চোখ থেকে লাল আলো বের হতে লাগলো।
সেই সাথে কক্ষে বিকট আওয়াজ হলো।
সবাই তাকিয়ে দেখলো, কক্ষের সকল মমি কফিন ভেঙে উঠে দাঁড়িয়েছে।
আর ধীর পায়ে হালকা বাঁকা হয়ে এগিয়ে আসছে তাদের দিকে।

এদিকে স্যামুয়েল উইজ এর মমিটিও উঠে বসে পড়লো।
তারপর তাদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসতে লাগলো।

ভয়ে তাদের তিনজনের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।
শ্রেয়া রীতিমতো কেঁদে বলতে লাগল, "এবার আর রক্ষা নেই। সবাই তৈরি হয়ে নাও। এই মমিদের পেটে যাওয়ার জন্য।"

তার কথা শুনে শাহীন জবাব দিলো, "সব নাহয় ঠিক আছে। কিন্তু স্যামুয়েল উইজ এর মমি কিভাবে হলো? সে তো বেঁচে আছে নাকি।"

তার কথা শুনে স্যামুয়েল উইজ এর মমি উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো।
চলবে.....

লেখাঃ Shourav Islam Shahin (গল্প কথক)

আপনার দুই লাইনের মন্তব্য।
আমায় বেশ কিছু লাইন লিখতে অনুপ্রেরণা দিবে।
আশাকরি সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।
হ্যাপি রিডিং।