------"ম্যাজিক বুক"-----
-----"অষ্টম পর্ব"------

দুজনের মস্তিষ্কের মাঝেই রহস্য জট পাকিয়ে দিচ্ছে।
তাদের মনে একটাই প্রশ্ন,"আসল স্যামুয়েল উইজ কে?"

শ্রেয়া শাহীনকে বললো, "চলো, নানু ভাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলি। তারপর বিস্তারিত বলি। তার কাছ থেকেই জেনে নিই, আসল স্যামুয়েল উইজ কে? ইনি যদি আসল স্যামুয়েল উইজ হয়, তাহলে তারমতো দেখতে হুবুহু সেই লোকটা কে? আর কেনইবা সেই মেয়ে তিনটিকে ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেললো।"

এবার শাহীন বলতে লাগলো, "আমাদের উচিত চুপ করে থাকা। আর দেখা উচিত শেষ অব্দি কি হয়? যদি এখনই সব এনাকে বলি, তাহলে হয়তো আমাদের ভুলভাল কিছু বুঝিয়ে দিবে। আমরা আসল রহস্য উদঘাটন করতে পারবো না। আগে সোলেমানি জাদুর কিতাব সংগ্রহ করি তারপর দেখা যাবে। এখন আপাতত না জানার ভান করতে হবে।
তুমি চুপচাপ শুয়ে পড়।"

অতঃপর তারা দুজনেই চুপচাপ শুয়ে পড়লো।
তবুও মনের কোণে সন্দেহ ঠিকই ঘুরপাক খাচ্ছে।

সবকিছু ভাবতে ভাবতে একসময় দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে ।

সূর্যের আলো চোখে পড়তেই সবার ঘুম ভেঙে গেলো।

তারা ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলো স্যামুয়েল উইজ নেই।
তার জায়গায় একটি চিরকুট পড়ে রয়েছে।
শাহীন চিরকুট হাতে নিয়ে সবার সম্মুখে পড়তে লাগলো, "আমি 'চেরোফেন' এর কালো জাদুর কাছে বন্দী। যখন ইচ্ছে সে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমার শরীরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন তার হাতে।
এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটা-ই উপায় রয়েছে। আর সেটা হলো 'সোলেমানি জাদুর কিতাব ' যার সাহায্যে চেরোফেনের সমস্ত জাদুর শহর ধ্বংস করা সম্ভব। সেই সাথে গবলিনদের কবল থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
তোমরা আমার জন্য মোটেও বিচলিত হয়ো না। সর্ব প্রথম নকশা অনুযায়ী যাও আর সোলেমানি জাদুর কিতাব সংগ্রহ করো। সেখানেই সকল নিদর্শন রয়েছে মুক্তির।
ইতি
স্যামুয়েল উইজ।"

সবাই মনোযোগ সহকারে চিরকুটের কথাগুলো শ্রবণ করলো।
অতঃপর সৌরভ, শাহীন এবং শ্রেয়া সময় অপচয় না করে রওনা দিলো সোলেমানি কিতাবের উদ্দেশ্যে।

সবাই অগ্রসর হচ্ছে নকশা অনুযায়ী।
পথিমধ্যে সৌরভ বলতে লাগলো,
"আচ্ছা, স্যামুয়েল উইজ আমাদের তো ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে বিস্তারিত জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা না করে; চিরকুট লিখে রেখে গেলেন! আসলে তার মাথায় কি চলছে?"

শাহীন প্রতুত্তরে টিটকারি দিয়ে বললো, "বুড়োর শেষ বয়সে ভীমরতি হয়েছে। নিশ্চয়  তার মাথায় অন্য কিছু খেলছে। অথবা সত্যি সত্যি চেরোফেনের ডাকে সাড়া দিয়েছে।
যাইহোক বুড়োটাকে আমার একদম সহ্য হয়না।"

"এই শাহীন্ন্যা, মুখ সামলে কথা বলবা। আমার নানু ভাই বুড়ো নয় ওকে!" কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বললো শ্রেয়া।

"হুম, তোমার নানু তো পঁচাত্তর বয়সের যুবক। আর তোমার নানি ষাট বয়সের যুবতি। আর তুমি হলে কুড়ি বছরের বুড়ি।" বলেই হো হো করে হেসে উঠলো সৌরভ এবং শাহীন।

"হেই ইউ। ঠাট্টা বন্ধ করে নকশা দেখে বলো আর কতদূর যেতে হবে।" কপট রাগত স্বরে বললো শ্রেয়া।

"যার সামনে এত সুন্দরী কুড়ি বছরের বুড়ি রয়েছে, তার কোথাও যেতে নকশা লাগেনা। " মুচকি হেসে বললো শাহীন।

"আচ্ছা তোরা এবার থাম। অনেক হয়েছে।  ওই দেখ সামনে একটি সুক্ষ্ম ব্রীজ দেখা যাচ্ছে। যার নিচ দিয়ে টগবগিয়ে যাচ্ছে ফুটন্ত লাভা। নকশায় তো এই ব্রীজের কথায় বলা হয়েছে। " একনাগাড়ে বললো সৌরভ।

তারা ব্রীজটির নিকটে গেলো।
চারপাশে ফুটন্ত লাভা। যদি একবার পা ফসকে পড়ে যায়, তাহলে নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
সুতরাং তাদের জন্য ব্রীজটি অত্যন্ত বিপদজনক।

শাহীন বলতে লাগলো, " এই যে মিস বুড়ি।চাইলে আমার হাত ধরে পাড় হতে পারেন।
তাহলে নিরাপত্তা পাবেন অনেকটায়। আর ইচ্ছে হলে সারাজীবনে হাতটা না ছাড়লেও চলবে। আপনার জন্য আমার হাতই নিরাপদ স্থল।"

"দেখুন, সবসময় ফাজলামো করবেন না। এটা কিন্তু জীবন মরণের বিষয়। একবার পা ফসকে গেলে পগার পার হয়ে যাবেন।" গম্ভীরমুখে বললো শ্রেয়া।

অতঃপর তারা ব্রীজ পার হওয়ার জন্য ব্রীজে উঠলো।
ধীরে ধীরে ব্রীজের উপর দিয়ে যাচ্ছে সৌরভ।
তার পিছনে শ্রেয়া। আর সবার পিছে রয়েছে শাহীন।

শাহীন মোটেও ভয় পাচ্ছে না। বরং এই বিপদের মুখেও গান গাচ্ছে," এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো বুড়ি বলো তো আমায়।"

"আরেকবার যদি ওমন বেসুরে গলায় গান করেন আর আমায় বুড়ি বলেন তাহলে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিব।" বললো শ্রেয়া।

"ওহ মাই গড! মহারানী দেখে রেগে যাচ্ছে। কুল ডাউন মিস বুড়ি। " বললো শাহীন।

সৌরভ ব্রীজ অতিক্রম করে ফেলেছে ।
তারপর পার হলো শ্রেয়া।

অতঃপর শাহীন পার হতে যাবে, ঠিক সেইসময় পা ফসকে নিচে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।
ভাগ্যক্রমে ব্রীজের এক পাশে ধরে ঝুলে রইলো শাহীন।
অবস্থা এমন বেগতিক এই বুঝি শাহীনের হাত ছুটে গিয়ে জ্বলন্ত লাভায় পড়ে যায়।
বহুকষ্টে টিকে রয়েছে সে।

এমন পরিস্থিতিতে সৌরভ আর শ্রেয়া দুজনে চটজলদি তার কাছে গিয়ে টেনে তুললো।
তারপর তাকে নিয়ে ব্রীজ অতিক্রান্ত হয়ে গেলো।
শাহীন যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

ব্যাঙ্গ করে শ্রেয়া বলতে লাগলো, "কি মিস্টার? আপনার সেই শেষ না হওয়া পথের ফাঁদে পড়ে তো প্রায় নিজেই শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন।"

শাহীন লজ্জায় মাথা অবনত করে ফেললো।

সবাই নকশা দেখে চুপচাপ হাঁটছে।
কারো মুখেই কথা নেই।
কিছুদূর যাওয়ার পর নকশা অনুযায়ী একটি পাহাড় পেয়ে গেলো তারা। পাহাড় বললে ভুল হবে। এটা একটা পিরামিড। হয়তো প্রাচীনকালে নির্মাণ করে রেখেছিলেন কোনো রাজা।

যাইহোক তারা ভিতরে প্রবেশ করার পথ খুঁজতে লাগলো।
অবশেষে পেয়েও গেলো।
ভিতরে প্রবেশ করে সবাই অবাক।
কেমন যেনো বিদঘুটে বিশ্রী গন্ধ তাদের নাকে আসছে।
মনে হচ্ছে হাজারো ইঁদুর মরে এমন দুর্গন্ধ তৈরি হয়েছে।

নাক চেপে কোনোমতে টর্চ জ্বালায় তারা।
তারপর ভিতরে যেতে লাগে।
অসংখ্য সুরঙ্গ রয়েছে।
ভাবতে পারছেনা কোনটা ছেড়ে কোনটায় যাবে।

অবশেষে একটা সুরঙ্গে পা রাখার সাথে সাথেই পিছলে নিচের দিকে যেতে লাগলো তারা।
বেশ কিছুক্ষণ পর তারা একটি নির্দিষ্ট কক্ষের ভেতরে গিয়ে থেমে গেলো।
তারা নিচে পড়া মাত্রই অসংখ্য বাদুড় উড়ে গেলো ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ তুলে।
সেই সাথে তো রয়েছেই আরো অনান্য উদ্ভট আওয়াজ।

সবাই টর্চ ফেলে দেখলো অসংখ্য কফিন রাখা রয়েছে এই কক্ষে।
যার ভিতরে হয়তো লাশের মমি বানিয়ে রাখা হয়েছে।

শ্রেয়া ফিসফিসিয়ে বললো, "আমরা সোলেমানি কিতাব কোথায় পাব? এটাই তো নকশার সেই কক্ষ। যেখানে সোলেমানি জাদুর কিতাব রয়েছে।" কথাগুলি বার কয়েক প্রতিধ্বনি হলো।
কারণ চারপাশে শুধু দেয়াল আর দেয়াল। তাই কথা বললে সেগুলোর প্রতিধ্বনি হয়ে নিজেদের কানেই বাজতে থাকে।

সৌরভ বললো," আমার মনে হয় এই কফিন গুলোর মধ্যেই কোথাও সেই বুক রাখা রয়েছে। "

শ্রেয়াও তার কথার সাথে তাল মিলালো।
অতঃপর বাধ্য হয়েই শাহীন কফিন খুলতে রাজী হলো।

সৌরভ সাহস দেখিয়ে একটি কফিন খুললো।
খুলে দেখলো একটি যুবতি মেয়ের লাশের মমি।
মমি থেকে বিশ্রী গন্ধ নাকে আসছে।
মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে যাবে তাদের।

এর মাঝে শাহীন মশকারা করে সৌরভকে বললো, "যাক অবশেষে তোর বউ পাওয়া গেছে । মৃত হোক তবুও তো মেয়ে। তোর ভালোবাসায় তাকে জীবিত করে তোল।
বলেই হেসে উঠলো শাহীন।

তারপর মমির কাছে গিয়ে ডাক দিলো, " ও ভাবী, আর কতকাল একা থাকবা? এবার তো চোখ খুলো। তোমার জামাই এসেছে।"

বলা মাত্রই মমির চোখ খুলে গেলো।
আর সে নীলাভ দৃষ্টি দিয়ে শাহীনের দিকে তাকালো।
শাহীন মাগো বলে চিৎকার দিয়ে দূরে সরে গেলো।

তারপর মমির লাশটা ধীরে ধীরে উঠে বসলো।
সম্পুর্ন দাঁড়িয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো তাদের দিকে।
এক লাফে গিয়ে জাপটে ধরলো শাহীনকে।
মমির শরীরে হাজারো ব্যান্ডেজ করা।
দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তার গা থেকে। আর পঁচা গলা উদ্ভট গন্ধ।
সে শাহীনের ঘাড়ে কামড় বসালো।
মহূর্তেই শ্রেয়া ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে মমির গায়ে আঘাত করলো।
যার ফলে মমি ব্যথা পেয়ে শাহীনকে ছেড়ে দিলো।
তারপর সবাই মিলে আঘাত করলো মমি টাকে।
আর শ্রেয়া, মমির সারাদেহ ক্ষত বিক্ষত করে দিলো।
ছুরি দিয়ে গলাটা আলাদা করতেই মমি নিস্তেজ হয়ে গেলো।

শাহীন শ্রেয়ার পিছে গিয়ে দাঁড়ালো ভয়ে।
হঠাৎ শান্ত পরিবেশ অশান্ত হয়ে গেলো।
কক্ষের অন্ধকার বেড়ে গেলো।
প্রত্যেক কফিন থেকে গড়গড় আওয়াজ আসতে লাগলো।
মনে হচ্ছে সব যেনো কফিন ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসবে।
এমন পরিস্থিতিতে সবাই বাকরুদ্ধ।  তারা ভেবে পাচ্ছে না, কিভাবে এই মমিদের মোকাবেলা করবে। তাদের কাছে তো যথেষ্ট শক্তিও নেই।
তাহলে কি এই অন্ধকার ঘরে মাটির নিচে মমিদের কাছে প্রাণ দিতে হবে সবার?
চলবে...

লেখাঃShourav Islam Shahin (গল্প কথক)

সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।
ভালোবাসা অবিরাম।