গল্প: ভুতের সাথে প্রেম
লেখক: আশিকুর রহমান
পর্ব:১
বেশ কিছুদিন আগে! রাতের বেলা আমি ফেসবুক চালাচ্ছি। তো হঠাৎ ইনবক্সে এক মেয়ের মেসেজ।
"Hi,Vaiya"
"আসসালামু আলাইকুম। জ্বী বলুন?"
"কেমন আছেন?"
"আলহামদুলিল্লাহ! আপনি?"
"জ্বী ভালো। কী করেন?"
"কিছুনা। বসে আছি! আপনি?"
"আমি শুয়ে আছি"
আমাকে কোনো প্রশ্ন না করায় আমি লাভ রিয়েক্ট দিয়ে সিন করে রাখলাম। কিছুক্ষন পর!
"এইযে মিস্টার? এতো দেমাগ কীসের?"
"সরি? দেমাগ কোথায় দেখালাম?"
" সিন করে রাখলেন।মেসেজ দিলেননা!"
"সরি! কিন্তু আপনি তো কিছু জিজ্ঞাস করেননি। তাই আমি কী বলব?"
"তাও ঠিক। ডিনার করছেন?"
"জ্বীহ। আপনি?"
"হুম! করেছি । আপনি?"
"হুম! "
"আপনাকে একটা কথা বলব ভাইয়া?"
"হুম বলেন! "
"মাইন্ড করবেন নাতো?"
"মাইন্ড করার মতো হলে করবো। আপনি বলে তো দেখুন।"
"আপনার জি এফ আছে?"
"হঠাৎ এই প্রশ্ন?"
"আসলে আমি আপনার লেখা পড়ে প্রেমে পড়ে গেছি!"
"কী কীহ? আমি জানি আমার লেখা পড়ে মানুষ মজা পায়, ভয় পায়! রাগ করে। আর আপনি কীনা প্রেমে পড়েছেন? মাঝ রাত্রি মজা করার লোক পাননি?"
"সত্যিই বলছি। আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি।"
"দেখুন। আমি রোমান্টিক গল্প লিখি না যে প্রেমে পড়বেন।"
"সত্যিই বলছি। "
"ইয়ার্কি বাদ দেন। আমার তো আপনাকে ফেক মনে হচ্ছে।"
"না ভাইয়া। আমি সত্যিই মেয়ে।"
"দেখুন। আমি একজনকে ভালোবাসি।সে বলেছে আমাকে অপেক্ষা করতে। এর মধ্যে আপনি এসে জুড়ে বসেছেন!"
" আপনি জানেন আমি কে?"
"কে আপনি? Branmonbaria এর মেয়ে নাকি? আমি ওসব ব্রামনবাড়িয়ার লোকদের ভয় পাই না।"
"না আমি ব্রামনবাড়িয়ার না।"
"তাহলে? নোয়াখালীর? চিটাগংয়ের? এদের কাউকে আমি ভয় পাইনা। "
"আমি কে তা শুনলে আপনি প্যান্টে হিসু করে দিবেন!"
"কে আপনি? হিরো আলমের বোন? নাকি শেখ হাসিনার নাতনি?"
"আমি কে তা পরে বলব!"
" আচ্ছা আপনার রিয়েল নাম কী? প্রোফাইলে নাম দিয়ে রাখছেন "উড়ন্ত বাতাসের ঝুলন্ত পরী'।"
"আমার নাম আনিশা আক্তার রিয়া।"
"তা! রিয়েল নাম দিলেই পারেন। বুঝতে সুবিধা হবে।"
"ও আপনি বুঝবেননা! সময় হলে জানবেন।"
"ওকা। বায়!"
"এই শুনুন? কৌ জান?"
"কেনো কী হয়েছে? আমার গল্প লিখতে হবে।"
"বাদ দেন এসব গল্প! আগে বলেন আমার লগে প্রেম করবেন?"
"সরি!আমি পারবো না। আমার ভালো লাগে না । আপনারে দেখিই নাই। আবার প্রেম? আপনার ছবি দেনতো।"
বেশ কিছুক্ষন হয়ে গেলো কোনো রিপ্লাই নেই। ভাবলাম শালা ফেক আইডি। মাঝ রাত্রে মজা করতে আসছে। অতপর, আমি পোষ্টের কমেন্টের রিপ্লাই দিতে লাগলাম। হঠাৎ, ঐ "উড়ন্ত বাতাসের ঝুলন্ত পরীর"এসেজ এলো। নোটিফিকেশন এলো,
'উড়ন্ত বাতাসের Sent You a Photo"।
আমি তাড়াতাড়ি ইনবক্সে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি শাড়ি পড়া এক মেয়ে আম গাছের ডালের উপর বসে আছে।ইয়া বড় আম গাছের ইয়া বড় ডালে। ইয়া এক্খান থুক্কু চিকনা এক্খান মাইয়া বসে আছে। দেখতে সুন্দরই লাগছে। চুলের খোপায় ফুল। লাল ব্লাউজ। তার উপর লাল সাদা কালারের শাড়ি। অতপর, আমি মেসেজ দিলাম!
"আর কোনো পিক পাইলেননা? এইডাই দেওয়া লাগলো?"
"আসলে। আমার ফোনে আপাতত এই টাই আছে। আমি এখানে থাকি।"
"মানে মানে কীহ?"
"মানে আবার কী? আমি ভুত।"
"মাঝরাত্রে মজা কইরেননা। এমনিতেই ভুতে ভয় পাই।"
"আগে বলেন! আমার সাথে প্রেম করবেন নাকি?"
"নাহ! সম্ভব না। আমি পারবো না!"
"তাহলে! আমি আপনার ঘাড় মুটকে দিবো।:
"কী বলেন এসব? পাগলামি শুরু করছেন?"
"বলেন! আমি কীভাবে আপনাকে বিশ্বাস করাব?"
"আচ্ছা! আজ রাত্রে আমার বাসার বাসার জানালার কাছে এসে আমাকে ডাক দিয়েন।"
"আচ্ছা। তয় ভয় পাইবেননা কিন্তু!"
"আচ্ছা। আসেন!"
টেক্সটা সেন্ড করে আমি ঘুমাতে চলে গেলাম। হঠাৎ, রাত 2 টার সময়। জানালায় ঠক ঠক।
"কে কে? কে ওখানে?"
"মিস্টার আশিক? আমি! ফেসবুকের উড়ন্ত বাতাসের ঝুলন্ত পরী।"
"তারমানে? আপনি সত্যিই?"
"হুম!"
কথা বলতে বলতেই জানালা খুলে যা দেখলাম তা বিশ্বাস করার মতো না। আমি দেখলাম, সাদা কাপড় পড়া একটা মাঝ বয়সি মেয়ে আমার জানালার সামনে ভাসতেছে! আমার চোখ দুটো যেনো খুলে পড়বে। আমি তাড়াতাড়ি করে জানালাটা লাগিয়ে কাথা মুড়িয়ে শুইলাম।
"এইযে মিস্টার। ভয় পাইয়েননা। ম্যাসেন্জারে ঢুকেন না হলে কিন্তু ঘাড় মুটকে দিবো।" ফিসফিসিয়ে জানালার কাছে এসে বলল মেয়েটি।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি ম্যাসেন্জারে ঢুকলাম। মেয়েটা সাথে সাথে টেক্সট করলো!
"কেমন লাগলো আমাকে?"
"ইয়ে মানে? কী বলব! আপনি এতো সুন্দরী। আমার মতো একটা ছেলেকে পছন্দ করলেন? আমি কিন্তু অনেক খারাপ ছেলে।"
"হুম তা দেখেই বোঝা যায়! আপনাকে শাসন করার জন্যই তো আসছি!"
"কী কী?"
"ধুর এতো প্রশ্ন করেন কেন?"
"আজ থেকে আপনি আমার সব"
"আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো?"
"হুম করেন!"
"আপনি ফেসবুক কেমনে চালান? সিম কৌ পাইছেন? ফোন কৌ পাইছেন?"
"আরেহ; আমি বড়লোক্স ভুত। আমার বাপের অনেক হাড্ডি।"
"মানে?"
"মানে আপনারা টাকা দিয়ে জিনিসপত্র কিনেন আর আমরা হাড্ডি দিয়ে!"
"ওহ!"
"আর, আমার আম গাছের উপর Wifi line আছে!"
"ওরে বাবাহ। কী বলেন"
"হুম।"
"তা পৃথিবীতে থাকার সময় কী প্রেম করেননাই? এহন মরার পর ভুত হয়ে প্রেম করতে ইচ্ছা করে?"
"আর বইলেননা। আমি অনেক কম বয়সে এক দূর্ঘটনায় মারা যাই ফ্যামিলি সহ। তারপর থেকেই আমরা ভুত।"
"ভাভাগো বাবা। আপনার রাজ্যে ছেলের অভাব পড়ছে? যে আমার লগে প্রেম করতে হয়?"
"এই রাজ্যের ছেলে গুলা অনেক পচা! "
"ক্যান? কী করছে?"
"থাক বাদ দেন ওসব। আগে বলেন আপনার আমার কেমন লাগছে?"
"হুম ভালো। আপনার ঐ চোখ দেইখ্খা আমি ভয় পাইছি!"
"হা হা হা! আমার চোখ এতো ভয়ের?"
"হুম! ভয়ের!"
"তা আপনার ভুতের রাজ্যে কী কী আছে?"
"সব আছে আপনাদের মতো।"
"মানে?"
"মানে কী আপনারা যা করেন আমরাও তা করি। আমরা আম গাছের ভিতর সুন্দর এক রাজ প্রাসাদে থাকি!"
"তাতো জানি। বলছিলেন তো আপনারা বড়লোক!"
"হুম। আমার বাপের অনেক.."
"হাড্ডি। বুঝছি আর বলা লাগবে না!"
"হুম"
"এই হাড্ডি কৌ পাও?"
"ক্যান? এগুলা মানুষের হাড্ডি।"
"কস কী ভাই"
"ঐ আমি আপনার জি এফ। ভাই না"
"বাদ দেন আপু!"
আমারে ছাইড়া দেন। প্লিজ। আমি ভুতে ভয় পাই!"
"আরেহ! আমি আপনেরে অনেক ভালো বাসুম। এতো ভালোবাসা দিবো যে আপনিও ভুত হয়ে যাবেন!"
"কী? আমি ভুত হতে চাই না।"
"আমি তো বানায় ছাড়মু "
চলবে
0 Comments