--------"ম্যাজিক বুক"--------
------"দ্বিতীয় পর্ব"-----------

"তোমাকে এই বুক খোলার অনুমতি কে দিয়েছে?" সেই ইঁদুর জাতীয় প্রাণীটি বললো।

"এমন কি রয়েছে এই বুকের ভিতর? যেটা খোলার জন্য আমায় আঘাত করলেন। আর আপনি কে? দেখতে এমন উদ্ভট কেনো?" শাহীন জানতে চাইলো।

"আমার নাম রেটলিন। আর যে বুকটি তুমি খুলেছ, সেটি একটি ম্যাজিক বুক।
আমার মাষ্টার স্যামুয়েল উইজ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে জাদুর উপকরণ সংগ্রহ করে বইটিতে লিপিবদ্ধ করেছেন। এই ম্যাজিক বুকের মাধ্যমে তুমি অনেক কিছুই তোমার বশে নিয়ে আসতে পারবে।
আমি দীর্ঘ পয়ষট্টি বছর যাবত বুকটি লুকিয়ে রেখেছি। মাষ্টার স্যামুয়েল উইজ নিরুদ্দেশ হওয়ার পূর্বে আমায় বুকটি সংরক্ষিত করে রাখার দায়িত্ব দিয়ে যান।"

শাহীন বলতে লাগলো, "বুকটি লুকিয়ে রাখার প্রয়োজন কি?
যদি লুকিয়েই রাখতে হবে, তাহলে এটা লিখার সার্থকতা কি?"

"এই বইয়ের ক্ষমতা পাওয়ার জন্য অনেক গবলিন এর পিছনে লেগে আছে।" রেটলিন বললো।

"গবলিন আবার কি? তারাও কি আমাদের মতো মানুষ? আর এটা দিয়ে তারা কি করবে?" শাহীন জানতে চাইলো।

রেটলিন জবাব দিলো, "গবলিন হচ্ছে অপদেবতা যাদেরকে তোমরা ভূত প্রেত নামে চেনো। যারা এই বুক দিয়ে পুরো পৃথিবীর ওপর রাজত্ব করতে চাই।"

"ওহ মাই গড! তাহলে তো এটা ভয়ংকর ব্যাপার।"

"এই ছেলে তুমি এখান থেকে চলে যাও।
নাহয় খুব খারাপ হয়ে যাবে।"
 রেটলিন তার  আকৃতি পরিবর্তন করে সামান্য বড় হয়ে গেলো। আর রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে শাহীনের দিকে বিভিন্ন জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারতে লাগলো।"

সম্পুর্ণ ঘর কাঁপতে লাগলো।
মনে হচ্ছে শাহীন এখানে থাকলে বিপদে পড়ে যাবে।
সে তৎক্ষনাৎ বুকটি নিয়ে কাঠের তৈরি লিফটের কাছে গেলো।
আর রশি ছেড়ে ছেড়ে আগের জায়গায় চলে আসলো।

বুকটি লুকিয়ে নিয়ে ছাদে গেলো, জেরিন আর সৌরভের কাছে।
কিন্তু ছাদে গিয়ে দেখলো ছাদে কেউ নেই।
ছাদ থেকে তার দৃষ্টি গেলো কাজলা দিঘীর দিকে।
সে দেখলো জেরিন পানিতে নেমে সাঁতার কাটছে।
শাহীন ভাবলো এত রাতে জেরিন পুকুরে কেনো?

সে বুকটি তার শয়নগৃহে একটা ট্রাঙ্কের ভেতর রেখে দিলো।
তারপর জলদি পুকুরের কাছে গেলো।
দেখলো পুকুরে জেরিন নেই।
সে আতংকিত হয়ে গেলো।
আর ভাবতে লাগলো, "তাহলে কি সেটা তার চোখের ভুল ছিলো?"

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই ঘুরে দাঁড়ালো ফিরে আসার জন্য।
এমন মুহুর্তে পুকুরের কাছে একটি ইউকিলোপিটাস গাছ থেকে কোনো কিছুর শব্দ তার কানে আসলো।
সেদিকে তাকিয়ে দেখলো একটি বাদুড় উড়ে গেলো।

গাছের থেকে একটু দূরে পুকুরের মাঝে নীল পদ্ম দেখা যাচ্ছে।
চাঁদের আলোয় সেগুলো থেকে ঝিলিক আসছে।
সে দেখে সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে গেলো।
তার মন যেনো সেগুলো পেতে চাইছে।

সে তার উৎফুল্ল মনের ডাকে সায় দিলো।
মুহুর্তেই গাছের নিকটে গেলো।
দেখলো, এক পা পুকুরে নামিয়ে দিলেই, টানা দিয়ে পদ্ম উঠানো যাবে।
সে এক হাতে ইউকিলোপিটাস গাছ টেনে ধরলো। তারপর আরেক পা নামিয়ে দিলো পানিতে।
পানিতে পা দেওয়ায় কেমন যেনো আওয়াজ হলো। সে কিছুটা ভয় গেলো।
পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে পদ্ম ফুলে হাত দিলো।

কয়েকটি ফুল ছিঁড়ার পর উঠে আসতে চাইলো।
কিন্তু শাহীন কোনোভাবেই তার পা উঠাতে পারছে না।
ভয়ে তার লোম দাঁড়িয়ে গেলো।
মনে হচ্ছে পানির নিচ থেকে কোনো কিছু তার পা পেঁচিয়ে নিয়েছে।
শাহীন চিৎকার করার চেষ্টা করতে লাগলো।
কিন্তু তার গলা থেকে বিন্দুমাত্র আওয়াজ বের হচ্ছে না।
সে ভয়ে জড়োসড়ো। চাঁদের আলো মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়লো।
যেনো চাঁদ আর মেঘমালা লুকোচুরি খেলছে।

সর্বোচ্চ শক্তি জুগিয়ে হাত দিয়ে গাছ ধরে দিলো টান।
 মুহুর্তেই তার পা ডাঙায় উঠে গেলো।
সে আর পিছন দিকে না তাকিয়ে দিলো ভোঁ দৌড়। এক দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।

ভেতরে ঢুকেই জেরিনের রুমে গেলো।
গিয়ে দেখলো জেরিন ঘুমোচ্ছে।
তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল।
তারপর শাহীনের সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বর্ননা করলো।
সব শুনে জেরিন বললো, "তুই কি মাঝ রাতে আমায় ঘুম থেকে জাগিয়ে মিথ্যে ভূতের গল্প শুনিয়ে ভয় দেখাচ্ছিস?"

"আমি মিথ্যে নয়,সব কিছু সত্যি বলছি।" শাহীন বললো।

"তুই কি এখান থেকে চলে যাবি? নাকি মার খাবি?"

সব শুনে শাহীন নিরুপায় হয়ে তার রুমে চলে গেলো।
গিয়ে দেখে সৌরভ ঘুমিয়ে আছে।

মূলত সৌরভ আর শাহীন এক সাথে ঘুমায়।

সৌরভ কে ঘুম থেকে জাগিয়ে সব খুলে বললো।
তারপর বুকের ব্যাপারেও বললো।
কিন্তু, কে শুনে কার কথা? সৌরভ বললো, ভাই ঘুমিয়ে পড়।
কাল সকালে দেখা যাবে।
এই বলেই পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলো।

শাহীন নিরুপায় হয়ে ট্রাঙ্ক খুলে বুক বের করলো।
প্রথম পৃষ্ঠা খোলার সাথেই সম্পুর্ণ ঘর কাঁপতে লাগলো।
মনে হচ্ছে ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেছে।

বইয়ের পৃষ্ঠা বন্ধ করার সাথেই সব থেমে গেলো।
সে বুক নিয়ে ট্রাঙ্কের ভেতরে ঢুকলো।
তারপর পড়া শুরু করলো।

প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ডেমনের ছবি দেওয়া।
সাথে লেখা কিছু মন্ত্র।
সাত পাঁচ না ভেবেই মন্ত্র পড়া শুরু করলো।
মন্ত্র শেষ হতেই অনুভব করলো, ট্রাঙ্ক হাওয়ায় ভাসছে।
ভাসতে ভাসতে এক জায়গায় ধপাস শব্দ করে পড়ে গেলো।

সে ট্রাঙ্কের মুখটা খুলে মাথা বের করলো।
দেখলো সে আর আগের জায়গায় নেই।
অন্যকোনো জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করলো।
চারপাশে তাকিয়ে দেখলো গভীর ঘণ জঙ্গল।
উঁচু উঁচু গাছ আর গাছ। ভেবে পাচ্ছে না সে কোথায়।
সে ম্যাজিক বুক লুকিয়ে নিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে লাগলো।

হঠাৎ একটি জাল তার গায়ের উপর পড়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেলো।
তাকিয়ে দেখলো, নীল বর্ণের কিছু ডেমন চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে।
শাহীনের বুঝতে বাকি রইলো না যে এগুলো অশুভ ডেমন।
শয়তানি শক্তির অধিকারী।

ডেমনগুলো তাকে বেঁধে নিয়ে যেতে লাগলো।
অবশেষে তাকে একটি বিশাল রাজপ্রাসাদের সামনে নিয়ে গেলো।

প্রাসাদের ভেতর থেকে একটি বিশাল আকৃতির ডেমন বেরিয়ে আসলো।
সেই ডেমন এর হুকুমে সবাই আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করলো।

দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
শাহীনকে আগুন লক্ষ্য করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সে ভেবে পাচ্ছে না কি হতে যাচ্ছে তার সাথে।
পরক্ষণেই খেয়াল হলো ম্যাজিক বুকের কথা।
সে ভাবতে লাগলো, "ম্যাজিক বুক কি পারবে তাকে রক্ষা করতে? নাকি এই জ্বলন্ত আগুনে পুড়ে মরতে হবে!
আসলে এই ডেমনগুলো কি চাই শাহীনের কাছে?
সে এসব ভাবনা ভাবতে ভাবতে ম্যাজিক বুক বের করলো।
আর ডেমন এর পৃষ্ঠায় ভালোভাবে চোখ বুলাতে লাগলো।
হঠাৎ একটি লেখা দেখে তার চোখ স্তম্ভিত হয়ে গেলো।
এটা কি? সত্যিই কি এই ডেমনদের হাতে প্রাণ দিতে হবে নাকি?
কোনো উপায় কি নেই বাঁচার?
ওহ মাই গড!

চলবে...

লেখাঃ Shourav Islam Shahin (গল্প কথক)

জানি এই পর্বটি তেমন ভালো হয়নি।
তবুও আগামী পর্বে নতুন কিছু আসবে ইনশাআল্লাহ।
সবার মন্তব্য আশা করছি।