------"ম্যাজিক বুক"------
------"তৃতীয় পর্ব"------

দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন।
আর আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে ডেমন'রা।
শাহীন ম্যাজিক বুকের পৃষ্ঠায় দেখলো, ডেমন'রা অত্যন্ত ভয়ংকর।
তবে তাদের ক্ষমতার বিপরীতে যদি কেউ কিছু করতে পারে, তাহলে ডেমন'রা তার আনুগত্য মেনে নিবে।

শাহীন পরের পৃষ্ঠা উলটাতেই দেখলো আগুনকে বরফ করে দেওয়ার মন্ত্র রয়েছে।
মৃত্যুর মুখে এসেও বেঁচে ফেরার জন্য ক্ষুদ্র প্রয়াস চোখে ভাসছে শাহীনের।
সে আর সময় অপচয় না করে চটজলদি মন্ত্র পড়ে ফেললো।

মন্ত্র শেষে, মুহুর্তের মধ্যেই আগুন বরফে পরিনত হয়ে গেলো।

ডেমন'রা এমন অদ্ভুত ঘটনা দেখে বিশ্মিত হয়ে গেলো।
শাহীনকে তারা ছেড়ে দিলো।

তাদের ভেতর থেকে বড় ডেমনটি বলে উঠলো, "আমাদের ক্ষমা করে দেন। আমরা আপনাকে দুর্ভাগ্যবশত চিনতে পারিনি।
আপনি যা বলবেন তাই হবে।"

"ঠিক আছে। তাহলে আমাকে আমার আগের জায়গায় ফেরত পাঠিয়ে দাও।"

"আপনি আবারও আগের মন্ত্রটা উল্টো  পড়ার সাথেই আগের জায়গায় পৌঁছে যাবেন।"

শাহীন আর বিলম্ব না করে ট্রাঙ্কের ভেতর ঢুকে পড়লো।
তারপর আবার আগের মন্ত্রটা উল্টো করে পড়লো।
ট্রাঙ্ক রীতিমতো কাঁপছে।
সে স্পষ্ট অনুভব করছে ট্রাঙ্ক হাওয়ায় ভাসছে।
কিছুক্ষণ পর পূর্বের ন্যায় ধপাস শব্দ হলো।
থেমে গেলো সকল কম্পন।
সে ট্রাঙ্কের মুখটা খুলে দিলো।
অতঃপর নিজেকে আবারও ঘরের মধ্যে আবিষ্কার করলো।
পাশেই খাটে সৌরভ ঘুমোচ্ছে।
সে আবারও সৌরভের কাছে গিয়ে ডাক দিলো।
সৌরভ ঘুম থেকে জেগে বলতে লাগলো, " কি ব্যাপার? এই মাত্রই তো ঘুম থেকে জাগিয়ে ম্যাজিক বুকের কথা বললে।
আবার কেনো বিরক্ত করছো?"
বলেই পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।

শাহীনও সৌরভের পাশে শুয়ে পড়লো।
আর ভাবতে লাগলো ম্যাজিক বুক এবং ডেমনদের কথা।

এদিকে, জেরিন বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।
হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে গেলো।
দেখলো তার চুলগুলো খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে।

সে এসব দেখেই চিল্লাচিল্লি আরম্ভ করে দিলো।
জেরিনের মনে হচ্ছে এসব শাহীন করেছে।
তারপর তাদের মা কে নিয়ে শাহীনের রুমে গেলো।
তাদের মা শেলি বলতে লাগলেন, "শাহীন, তুমি জেরিনের রুমে গিয়ে তার চুল খাটের সাথে বেঁধে দিয়েছিলে কেনো?"

"আমি যাইনি মম। আমি তো বই পড়তেছিলাম।" শাহীন বললো।

"হ্যাঁ মম, শাহীনতো এই রুমেই ছিলো।" সৌরভ শাহীনের কথার সাথে তাল মিলিয়ে বললো।

অতঃপর সবাই বিশ্মিত হয়ে যার যার রুমে চলে গেলো।
জেরিন ভাবতে লাগলো,"কে এই কাজ করতে পারে তাহলে?
কেয়ার টেকার মোতালেব মিয়ার কথায় ঠিক নয়তো? এই বাড়িতে সত্যিই কি ভূত রয়েছে? ধুর কি সব আজগুবি চিন্তাভাবনা করছি। আমি নিশ্চিত এটা শাহীনেরই কাজ ছিলো।"

পরদিন সকালে, শাহীন ঘুম থেকে উঠেই রেটলিন যে গোপন কক্ষে থাকে, সেখানে গেলো।
কিন্তু কোথাও তাকে দেখা যাচ্ছে না।

'হ্যালো, মিস্টার রেটলিন। কোথায় আপনি?
আপনাকে দেখা যাচ্ছে না কেনো?'

হঠাৎ পাশে অবস্থিত লাইব্রেরী কেঁপে উঠলো।
একটি বই উড়ে আসলো শাহীনের দিকে।

"ওহ মাই গড! কি হচ্ছে এসব? আর কে ওখানে?" শাহীন বললো।

হঠাৎই লাইব্রেরীর উপর রেটলিন অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান হলো।

"আপনি কি অদৃশ্য হতে পারেন? আপনাকে দেখা যাচ্ছিলো না কেনো?"

"আমি চাইলে আমায় তুমি দেখতে পাবে। আর যদি না চাই তাহলে দেখতে পাবে না।" রেটলিন বললো।

"ওহ তাই বলেন।"

"তুমি ম্যাজিক বুক আমায় ফেরত দাও। ওটা লুকিয়ে রাখতে হবে। তা-না হলে গবলিনরা এই বুক নিয়ে যাবে।
 আর তোমরা এ বাড়ি থেকে চলে যাও। নাহয় তোমার পরিবারের সবাই মারা পড়বে।" রেটলিন বললো।

"কেনো? কে মারবে আমাদের? আর কোথায় গবলিন?" শাহীন জানতে চাইলো।

"ওই যে বাহিরে তাকিয়ে দেখো। এই বাড়ী কে ঘিরে একটি রাউন্ড সার্কেল রয়েছে। তার চারপাশে অসংখ্য গবলিন দাঁড়িয়ে আছে। তারা এই সার্কেল ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেনা।
কিন্তু খুব শীঘ্রই তারা রাউন্ড সার্কেল ভেঙে ফেলবে।" রেটলিন বললো।

"কিন্তু আমি তো বাহিরে কোনো গবলিন দেখতে পাচ্ছিনা।" শাহীন জবাব দিলো।

"তুমি খালি চোখে গবলিনদের দেখতে পাবে না। এই নাও সার্কেল রিং। এই রিংয়ের সাহায্যে তাদের দেখতে পাবে।" বলেই রেটলিন ছোট্ট একটি রিং শাহীনের দিকে বাড়িয়ে দিল।

শাহীন রিং তার এক চোখের সামনে ধরলো।
আর দেখতে পেলো অসংখ্য গবলিন দাঁড়িয়ে আছে সার্কেল এর চারপাশে।
দেখতে প্রচুর ভয়ংকর। বিশেষ করে সুক্ষ্ম কিছু ধারালো দাঁত রয়েছে।
যার সাহায্যে যে কাউকে কামড়ে ধরে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতে পারবে।

কিন্তু একি? সৌরভ তো সার্কেলের বাহিরের দিকে যাচ্ছে।

"সৌরভ, ওদিকে যাস না। তাহলে তোকে গবলিনরা খেয়ে ফেলবে।" শাহীন চিৎকার করলো।

কিন্তু সৌরভ কিছুই শুনতে পারলো না।
জানালার কাচ ভেদ করে আওয়াজ সেখানে পৌছায়নি।

এক পর্যায়ে সৌরভকে গবলিনরা ধরে ফেললো। তারপর তাকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে যেতে লাগলো।
সৌরভ কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা।
তবে পায়ে কামড় অনুভব করতে পারছে।
সে চিৎকার করছে। কিন্তু কেউ শুনতে পারছেনা।

শাহীন এসব দেখে দৌড়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে গেলো।
তারপর গবলিনদের অনুসরণ করে যেতে লাগলো।
কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলো সৌরভকে একটি গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
শাহীনও একটি গাছের উপর ওঠে পড়লো।
তারপর লুকিয়ে লুকিয়ে সবকিছু দেখতে লাগলো।

গবলিনদের মাঝ থেকে হঠাৎ এক বৃদ্ধ বের হলো।
তারপর সে ধীরে ধীরে ভয়ংকর রূপ ধারণ করলো।
আর সৌরভকে বলতে লাগলো,
"কোথায় সেই বুক? আমি খবর পেয়েছি তোমার কাছেই সেই বুক রয়েছে। সেটা আমায় দিয়ে দাও। আমি তোমায় ছেড়ে দিব।"

শাহীনের সব শুনে বুঝতে বাকি রইলো না যে, সৌরভ আর শাহীনের চেহারা এক হওয়ায় সৌরভকে শাহীন ভেবে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে।

"কি হলো? বুকটা আমায় দাও।" বৃদ্ধটি গর্জন করে উঠলো।
সৌরভ বৃদ্ধ লোকটিকে ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারছেনা।

সৌরভের মনে পড়ে গেলো শাহীনের পাওয়া সেই ম্যাজিক বুকের কথা।
তারমানে এই বুকটিই চাচ্ছেন এই বৃদ্ধ।
সে বলতে লাগলো, "বুকটি আমার বাড়ীতে রেখে এসেছি। আমাকে ছেড়ে দেন। আমি বুক নিয়ে আসছি।"

শাহীন সব শুনে ভাবতে লাগলো,"সৌরভ কি সত্যি সত্যিই বুক দিয়ে দিবে? তাহলে তো বিপদ আরও বাড়বে।
এই গবলিনদের ইশ্বর তো আরও শক্তিশালী হয়ে যাবে। তারপর আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে।
যে করেই হোক, এই বুকটিকে আমায় রক্ষা করতেই হবে। কোনোভাবেই এই গবলিনদের হাতে দেওয়া যাবে না।

হঠাৎ শাহীনের পিঠে কারও স্পর্শ পেলো।
সে চমকে গেলো।
কোনো গবলিন তাকে লুকিয়ে থাকতে দেখে নিলো নাতো? তাহলে তো বিপদ আরও বাড়বে।
এসব ভাবতে ভাবতে পেছনে ঘুরে তাকালো শাহীন।
কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না।
সে পুরোপুরি ভড়কে গেলো।

কেউ নেই? অথচ স্পষ্ট শাহীন অনুভব করছে কারও হাতের স্পর্শ।
সে ভয়ে ভয়ে বললো," কে আমায় ধরে আছো? দেখতে পাচ্ছিনা কেনো?"

হঠাৎ শাহীনের চোখে কিছু তরল পদার্থ এসে পড়লো।
সাথে সাথেই তার চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।

চলবে......

লেখাঃ Shourav Islam Shahin (গল্প কথক)

পর্বটি দেরি করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত।
আশা করি সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।
আপনাদের মন্তব্য পেলে খুব শীঘ্রই আগামী পর্ব দিয়ে দিবো।