-----"ম্যাজিক বুক"------
----"চতুর্থ পর্ব"-------

চোখ খোলার পর শাহীন তাকিয়ে দেখলো, তার সামনে একটি তিন ফুট উচ্চতার প্রাণী দাঁড়িয়ে আছে। লোমযুক্ত শরীর তার। হাতে রয়েছে একটি পিঞ্জিরা। 
শাহীন প্রাণীটিকে বলতে লাগলো, "তুমিও কি গবলিন? তাহলে তোমার আকৃতি এমন কেনো? অন্য গবলিনদের সাথে তো একটুও মিল নেই।"

'হ্যালো মিস্টার। আমি গবলিন নয়।
আমি হলাম বার্ড হান্টার। আমার কাজ বার্ড শিকার করে তাকে খেয়ে ফেলা।
আমি এই কাজই করি।
কিন্তু আমি গবলিনদের মোটেও সহ্য করতে পারি না। আর আমাকে তোমার বন্ধু ভাবতে পারো।"

আচ্ছা বার্ড হান্টার একটি প্রশ্ন রয়েছে," তুমি এমন কি পদার্থ আমার চোখে ছুঁড়ে দিলে, যেটার প্রভাবে আমি রিং ছাড়াই খালি চোখে গবলিনদের দেখতে পাচ্ছি।"

'এটা হলো আমার চোখের থুতুর জাদু।
আমার থুতু কারো চোখে লাগলে সে খালি চোখেই গবলিন এবং আমাকে দেখতে পাবে।' 

'ওয়াও! তা মিস্টার বার্ড হান্টার, গবলিনদের থেকে কিভাবে সৌরভ কে উদ্ধার করা যায়? '

'এটা তো অত্যন্ত সহজ কাজ।
ওহ সুইট বার্ড, দাঁড়াও দাঁড়াও, এইতো আসছি আমি।' 
কথাটি বলেই বার্ড হান্টার একটি পাখির পিছে পিঞ্জিরা নিয়ে ছুটতে লাগলো। 

আমি নীরব দর্ষকের মতো তাকিয়ে দেখতে লাগলাম।

এদিকে সেই বৃদ্ধ সৌরভকে ছেড়ে দিলো।
শুধুমাত্র ম্যাজিক বুক ভেরত দেওয়ার বিনিময়ে।  
সৌরভ তো রাজি। 
সৌরভ বাড়ীর দিকে ছুটে যেতে লাগলো, উদ্দেশ্য ম্যাজিক বুক নিয়ে গবলিনদের ইশ্বর কে দিয়ে দেওয়া। 

শাহীনও সৌরভকে অনুসরণ করে ছুটতে লাগলো। 
একপর্যায়ে সৌরভ বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করলো।
কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই তাদের শয়নকক্ষ থেকে ম্যাজিক বুক নিয়ে সৌরভ বের হলো।
শাহীনও সৌরভের সামনে এসে হাজির হয়ে গেলো। 

"সৌরভ এই বুক তাদের হাতে দেওয়া যাবে না।" শাহীন বললো।

'কেনো দেওয়া যাবে না? 
এই বুক না দিলে আমাদের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলবে সেই বৃদ্ধ জাদুকর।" সৌরভ জবাব দিলো।

"আমরা যদি বুকটি তাদের হাতে তুলে দেই। 
তারপরও আমাদের প্রাণ দিতে হবে।
তাদের শক্তি আরও বেড়ে যাবে। গবলিনরা এখোনো আমাদের বাড়ির চারপাশে ঘিরে রয়েছে। " শাহীন প্রতুত্তর করলো।

"কিসের গবলিন? আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। " সৌরভ জবাব দিলো। 

"এই নাও সার্কেল রিং। এটা দিয়ে দেখতে পাবে।

সার্কেল রিং নিয়ে সবকিছু সুস্পষ্ট দেখতে পেলো সৌরভ। তার সকল সন্দেহ দূর হয়ে গেলো। 

" এখন আমাদের করণীয় কি? " সৌরভ জানতে চাইলো।

আমাদের এই ম্যাজিক বুক খুলে দেখতে হবে। আর এই বইয়ের গ্রন্থকার স্যামুয়েল উইজ এর সমন্ধে জানতে হবে। 
বইটি খুলে শেষের পৃষ্ঠায় লেখক সমন্ধে দেখলো। 
সেখানে লেখকের মেয়ের সাথে একটি ছবি দেওয়া রয়েছে। 

শাহীন সৌরভকে রেটলিন এর ব্যাপারে বললো। তার কাছে হয়তো লেখকের পরিবারের কোনো হদিস রয়েছে। 

হঠাৎ তাদের সামনে আসলো জেরিন। 
জেরিন বাহিরের দিকে যাচ্ছে।
শাহীন তাকে যাওয়ার জন্য নিষেধ করলো।
আর তাকে গবলিন সম্পর্কে সচেতন করলো।
কিন্তু জেরিন গবলিনের কথা শুনে হাসলো।
কারণ সে ভাবছে শাহীন তাকে বোকা বানাচ্ছে। 
তাই সে বাহিরে যেতে লাগলো।
এক পর্যায়ে রাউন্ড সার্কেল অতিক্রম করলো।
সাথে সাথেই কয়েকটা গবলিন তাকে শূণ্যে তুলে নিলো।
জেরিন কিছুই দেখতে পারছেনা। 
শুধুমাত্র পায়ে ব্যথা অনুভব করছে। 
আর শূন্যে ভেসে আছে।
এমন পরিস্থিতিতে শাহীন এবং সৌরভ জেরিনকে টেনে ধরলো। 
অনেক্ষণ টানাটানি করার পর জেরিনকে রাউন্ড সার্কেল এর ভেতরে নিয়ে আসতে সক্ষম হলো।

জেরিন রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। 
সে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা তাদের কাছে জানতে চাইলো। 
শাহীন তাকে সার্কেল রিং দিলো।

সার্কেল রিং এর সাহায্যে জেরিন সবকিছু সুস্পষ্ট দেখতে পেলো। 
সে বিশ্মিত চোখে শাহীনের দিকে তাকালো। 

তাদের এসব কর্মকাণ্ড দূর থেকে দেখছিলেন শেলি চৌধুরী। 
তিনিও সেই মুহূর্তে তাদের সামনে এসে উপস্থিত হলো। 
তারপর বিস্তারিত জানতে চাইলো। 

পাশ দিয়ে উঁড়ে যাচ্ছিলো বার্ড হান্টার। 
শাহীন তাকে ডাক দিলো।
তার থুতু এদের চোখে দেওয়ার জন্য।
যাতে তারা সার্কেল রিং ছাড়াই সবকিছু দেখতে পারে।

বার্ড হান্টার সাথে সাথেই সবার চোখে থুতু ছিটিয়ে দিলো।
তারপর সবাই চোখের সামনে সবকিছু অবকলন করতে লাগলো। 
শাহীনের কাছে সব রহস্যের সমাধান জানতে চাইলো বাকিরা। 
শাহীন তাদের বিস্তারিত খুলে বলে দিলো।
সবাই এই বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই।

শাহীন তাদের নিয়ে রেটলিন এর কক্ষে গেলো।

রেটলিনকে দেখে বাকিরা হতভম্ব হয়ে গেলো। 
কারণ তারা এর আগে কখোনো এমন উদ্ভট প্রাণী দেখে নি। 

"মিস্টার রেটলিন, আপনি আমাদের বলুন এই বুকের গ্রন্থকার স্যামুয়েল উইজ কোথায়?" শাহীন প্রশ্ন করলো।

"আমি জানি না। কিছুই জানি না। 
তবে মাস্টারের মেয়ে সাইরিন এই ব্যাপারে বলতে পারবে।" রেটলিন জবাব দিলো।"

"সাইরিন এর দেখা কোথায় পাবো?"

"সাইরিন, শেরপুর শহরের পাশে থানার সাথের ভবনটিতে থাকে।" রেটলিন বললো। 

"কিন্তু আমরা সেখানে কিভাবে যাবো? 
বাহিরে তো হাজার হাজার গবলিন রয়েছে।
তারা তো আমাদের দেখা মাত্রই মেরে ফেলবে।" শাহীন বললো।

রেটলিন সবার উদ্দ্যেশ্যে বললো," আমি একটি গোপন রাস্তা জানি শেরপুর যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেটি বলতে পারি। যদি তোমরা ম্যাজিক বুকটি আমায় ফেরত দাও।"

"ওকে, এই নিন আপনার বুক।"
বলেই শাহীন বুকটি একটি ট্রাঙ্কের মধ্যে রেখে রেটলিনকে দিলো।"

রেটলিন গোপন রাস্তার কথা বলে দিলো।
বাড়ির পেছনে একটি ছোট্ট সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। 
সেই সাইনবোর্ড সরানোর সাথে মাটির নিচের দিকে একটি সুরঙ্গ রয়েছে। 
যেটা মূলত শহরের মেইন হোল এর সাথে মিলিত হয়ে গিয়েছে। 
সেই সুরঙ্গ দিয়েই শহরে যাওয়া সম্ভব।

শাহীন আর জেরিন সাথে সাথেই রওনা দিলো। 
সৌরভ আর তার মা'কে বাড়ির ভেতরেই রেখে গেলো।

শাহীন আর জেরিন সাবধানে পা টিপে টিপে সাইনবোর্ড এর নিকটে গেলো। 
অতঃপর তৎপরতার সহিত সাইনবোর্ড সরালো।
একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন সুরঙ্গ বেড়িয়ে এলো।
তারা পিছনে তাকিয়ে দেখলো, কিছু গবলিন তাদের দেখতে পেয়েছে এবং তাদের দিকেই আসছে। 

তারা তৎক্ষনাৎ সুরঙ্গের ভেতর প্রবেশ করলো এবং সাইনবোর্ড দিয়ে সুরঙ্গ পথ বন্ধ করে দিলো। 
বন্ধ করার সাথেই দুটো গবলিন সাইনবোর্ডে আঘাত করলো।
তারা আর সময় নষ্ট না করে টর্চ জ্বালিয়ে দৌড়াতে লাগলো।

তারা সুরঙ্গের মাঝ দিয়ে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। 
শাহীন আর জেরিন উপলব্ধি করতে পারছে যে সুরঙ্গ পথের উপর দিয়ে কোনো বিশাল গবলিন তাদের অনুসরণ করছে।
কারণ উপর থেকে দুপদুপ আওয়াজ সেটাই জানান দিচ্ছে। 
পরিস্থিতি এমন ভয়ংকর, এই বুঝি মাটি ভেঙে নিচে আসে গবলিন।

হঠাৎ পিছনে এক জায়গায় মাটি ভেঙে বিশাল আকৃতির এক গবলিন নিচে আসলো।
আর শাহীন এবং জেরিনকে লক্ষ্য করে দৌড়াতে লাগলো। 
তারাও আগের চেয়ে গতি বাড়িয়ে দিলো।

কিছুদূর যেতেই শহরের রাস্তার মাঝখানে চলে আসলো। একটি মেইন হোল এর ঢাকনা সরালো।
তারপর জেরিনকে রাস্তায় তুলে দিলো।
শাহীন উঠতে যাবে এমন সময় গবলিন তাকে ধরে ফেললো। 
কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর শাহীন খুব কষ্টে রাস্তায় উঠে গেলো।
তারপর মেইন হোলের মুখ বন্ধ করে দিলো।

এবার তারা সাইরিন এর বাড়ির দিকে যেতে লাগলো। 
কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলো।
বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করলো তারা।

দেখলো বাড়ির একপাশে ফুলের বাগান রয়েছে। 
বাগানের মাঝে বসে আছে সাইরিন।
তারা সাইরিন এর কাছে গেলো।

"হ্যালো সাইরিন। আমরা আপনাদের বাড়ীটা ভাড়া নিয়েছি থাকার জন্য। আর সেখানে একটি ম্যাজিক বুক পেয়েছি। যেটার গ্রন্থকার আপনার পিতা।" শাহীন বললো। 

সাইরিন ম্যাজিক বুকের কথা শোনামাত্র ভয় পেয়ে গেলো। 
অতঃপর তাদের একটি রুমের ভেতরে নিয়ে দরজা, জানালা সব বন্ধ করে দিলো।

এবার মিস সাইরিন বলতে লাগলো,"কোথায় সেই অপয়া বুক? যার জন্য কৈশোরে আমার পিতাকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।"

"এই যে সেই বুক।"
বলেই বুকটি বের করে দিলো।
শাহীন তখন রেটলিনকে নকল একটি বুক দিয়েছে।
রেটলিন ভেবেছে সেটাই ম্যাজিক বুক।

যার জন্য এখন সাইরিনকে বুকটি দেখাতে পারছে তারা। 

"বুকটি লুকিয়ে রাখো। বের করোনা এটা। তাহলে সে চলে আসবে।" সাইরিন বললো। 

শাহীন জানতে চাইলো, "কে চলে আসবে?"

"সেই মায়াবী শক্তি। যেটা আমার ফাদারকে অদৃশ্য করে নিয়ে গেছে।"

"কি হয়েছিলো আপনার ফাদারের সাথে? দয়াকরে আমাদের বিস্তারিত খুলে বলুন।"

"তাহলে শুনো। এই ম্যাজিক বুক আমার ফাদারের সারাজীবনের একটি কাজ ছিলো না বরং এই ম্যাজিক বুক তার জীবন ছিলো। আমি তাকে শেষ যেদিন দেখেছিলাম তিনি খুব পেরেশান ছিলেন সেদিন।
তড়িঘড়ি করে বাড়ী ফিরেন সেদিন এবং একটি মন্ত্র পড়ে কোনোকিছুর গুড়ো বাড়ীর চারপাশে ছিটিয়ে দেন।
সাথেই সাথেই সেই জায়গাগুলোতে মাশরুম জন্মে যায় যেটা ছিলো প্রটেক্টিভ সার্কেল। 
কিন্তু আমি সে ব্যাপারে জানতাম না কিছুই। 
তাইতো সেদিন সেই মাশরুমগুলোর বাহিরে চলে গিয়েছিলাম। আমার ফাদার আমায় নিষেধ করেছিলো বাহিরে যেতে কিন্তু আমি শুনিনি তার বারন।
অতঃপর আমি শূন্যে ভাসতে থাকি। 
তারপর আমার ফাদার এসে আমায় রক্ষা করেন। 
আমাকে গবলিনদের থেকে রক্ষা করার পর কিছু আলোর ঝলকানি এসে আমার ফাদারকে ঘিরে ফেলে। আলোর ঝলকানিতে ধীরে ধীরে মিশে যায় আমার ফাদার। তিনি উপরের দিকে উঠে যান।
এরপর আর কখনো আমার ফাদারকে দেখি নি। "

"ওহ মাই গড! তারমানে স্যামুয়েল উইজ মারা যান নি। তাহলে তার কাছে পৌঁছানোর নিশ্চয় কোনো মাধ্যম রয়েছে।"

"হ্যাঁ, এই বুকের ভেতর দেখো, ব্রিফিন নামক একটি পাখি রয়েছে। যার সাহায্যে তুমি সেখানে পৌঁছাতে পারবে।"

এমন সময় ডোরবেল বাজলো। ভেতরে আসলো একটি সুন্দরী মেয়ে। 

"কে উনি?" শাহীন জানতে চাইলো। 

"এটা আমার নাতনি শ্রেয়া।"

"ওহ আচ্ছা।" 

অতঃপর জেরিন আর শাহীনের সাথে শ্রেয়ার পরিচয় করিয়ে দিলেন সাইরিন। 

কথোপকথনের এক পর্যায়ে শাহীনের ফ্যামিলির সবাই সেখানে চলে আসে। 
এমনকি তাদের পিতা আশিক সাহেবও। 

আশিক সাহেব বলতে লাগলেন, "শাহীন এই ম্যাজিক বুক আমায় দিয়ে দাও।"

"তুমি ম্যাজিক বুকের কথা কিভাবে জানলে ডেড?" 

"আমি তোমার বাবাকে সব বলেছি।" 
তাদের মা শেলি চৌধুরী বললেন।

"কিন্তু ডেড, এই বুক দিয়ে তুমি কি করবে?"শাহীন বললো।

" সেটা তোমার জানতে হবে না। আমি চাইছি দাও।"

তাদের মধ্যে কিঞ্চিৎ রাগারাগি হয়। 
হঠাৎ শাহীন সবাইকে অবাক করে দিয়ে টেবিলে থাকা ফল কাটার ছুরি তার বাবার বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। 
সবাই এই ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যায়। 
চলবে...

লেখাঃ Shourav Islam Shahin( গল্প কথক) 

গল্পে তেমন সাড়া পাচ্ছি না। 
তাই পর্ব দিতে আগ্রহ কমে যাচ্ছে।