-----"ম্যাজিক বুক"------
-----"পঞ্চম পর্ব"----

শাহীন তার বাবার বুকে ছুরি চালিয়ে নিজেও হতবাক! 
সবাই অদ্ভুত দৃষ্টি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
তার মা সাইরিন রেগেমেগে শাহীনকে থাপ্পড় মারলো। 
হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে আশিক সাহেব তার নিজের রুপ পরিবর্তন করে গবলিন এর আকৃতি ধারণ করলো। 


শাহীনের ধারণায় ঠিক।
 এটা তার বাবা নয় গবলিন ছিলো। 
কারণ তার বাবা এই বুকের জন্য রাগারাগি করতো না।

সবাই ভয় পেয়ে দূরে সরে গেলো। 
হঠাৎ গবলিন ক্রোধান্বিত হয়ে শাহীনকে প্রহার করতে লাগলো। 
শাহীনকে শূণ্যে তুলে দূরে ছুঁড়ে মারলো। 
এমন সময় সাইরিন বেগমের নাতনি শ্রেয়া, একটি পিস্তল নিয়ে হাজির।
সে সোজাসুজি গবলিন এর মাথায় গুলি ছুঁড়ে দিলো।
পর পর কয়েকটি গুলি লাগায় গবলিনটি মাটিতে পড়ে গেলো।

শাহীন সবার উদ্দ্যেশ্যে বললো, "আমাদের এখানে থাকা নিরাপদ নয়। আমাদের খুব শীঘ্রই প্রটেক্টিভ সার্কেল এর ভেতরে যেতে হবে, নাহয় গবলিনরা আবারও আক্রমণ করবে।
তারা সংখ্যায় অনেক বেশি। তাদের সাথে আমরা পেরে উঠবো না।
 আর যেকোনো মূল্যে তারা এই বুক পেতে চায়। সুতরাং আমাদের সাবধান থাকতে হবে।"

শাহীনের কথা শেষ হতেই সবাই গাড়ীতে গিয়ে বসলো।
তারপর গাড়ী স্টার্ট করে তারা সেই প্রটেক্টিভ সার্কেল সমৃদ্ধ বাড়ীতে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। 
গাড়ী ড্রাইভ করছে মিস শ্রেয়া। 
তার পাশে বসে আছে শাহীন।
আর বাকিরা সবাই পিছনের ছিটে বসে আছে। 
পাকা রাস্তা শেষে তারা কাঁচা রাস্তায় প্রবেশ করলো।  

রাস্তার দুপাশে ঘণ বাঁশঝাড়। 
হঠাৎ শ্রেয়া তাকিয়ে দেখলো সামনে কিছু বাঁশ রাস্তার উপর পড়ে আছে।  
সে ভেবে পাচ্ছে না কিভাবে সেখান দিয়ে গাড়ী নিয়ে যাবে। 
তাছাড়া এই রাস্তা দিয়ে সর্বোচ্চ আট মিনিটের মতো সময় লাগবে সেই বাড়ীতে পৌঁছাতে।  
শ্রেয়া, শাহীনের দিকে তাকালো।  
চোখের ইশারায় বোঝাতে চাইলো বাঁশের উপর দিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কিনা? 
শাহীন তাকে আস্বস্ত করলো। 

অতঃপর শ্রেয়া গাড়ীর গতি বাড়িয়ে বাঁশের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।  
প্রথম বাঁশ অনায়াসে পার হয়ে গেলো।
কিন্তু পরবর্তী বাঁশের উপর গাড়ী উঠা মাত্র বাঁশ উপরের দিকে উঠে যেতে লাগলো।  
গাড়ী সাথে সাথে হাল্কা জাম্প করলো। 
যার ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ী রাস্তার পাশে বাঁশঝাড়ের ভিতরে ঢুকে গেলো। 
গাড়ীর স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেলো।  

সবাই এরকম পরিস্থিতিতে ভীত প্রায়। 
অনেক কষ্টে গাড়ী থেকে বের হলেন তারা।
শ্রেয়া কয়েকবার চেষ্টা করেও গাড়ী স্টার্ট করতে পারলোনা।  
বাধ্য হয়ে সবাই হেঁটে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিলো। 

সবাই হাঁটছে। আকাশে রুপালী থালার মতো একটি চাঁদ উঠেছে। 
চাঁদের আলোয় চারদিক আলোকিত হয়ে গেছে। যার দরুন সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।  
হঠাৎ প্রকৃতি তার রুপ পরিবর্তন করে ফেললো। 
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই চাঁদ কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেলো।
চারদিক থেকে শা শা করে বাতাস বইতে আরম্ভ করলো। 
সেই সাথে আকাশে বিদ্যুৎের চমকানি তো রয়েছেই।
হুট করে এমন হওয়ায় সবাই ঘাবড়ে গেলো। 

তারা খেয়াল করলো পিছন থেকে কিছুর গোংরানির আওয়াজ আসছে।
তারা জোরে পা চালাতে লাগলো। 
ধীরে ধীরে আওয়াজ ক্রমশ বাড়তে লাগলো। 
কেউ ভয়ে পিছু ফিরে পর্যন্ত তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। 

শাহীনের মা শেলি চৌধুরী একটু সবার থেকে কিছুটা পিছে হাঁটছে। 
হঠাৎ তার পা গাছের শেকড়ে বেঁধে গেলো। 
ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। 
সে বিকট চিৎকার দিলো। 
চিৎকার শুনে সবাই ভয়ে তার সাথে তাল মিলিয়ে চিৎকার দিলো।

অনেক কষ্টে পা ছাড়িয়ে সবাই দৌড়াতে আরম্ভ করলো।  
সবাই খেয়াল করলো হাজার হাজার গবলিন তাদের পিছু নিয়েছে। 
এমন দৃশ্য দেখে সবাই প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। 

বাড়ীর কাছে চলে এসেছে সবাই। মাশরুমে ঘেরাও করা প্রটেক্টিভ সার্কেলে প্রবেশ করতে কয়েক গজ মাত্র বাকি।
এমন সময় সাইরিন বেগমের পা টেনে ধরলো কিছু গবলিন।
এদিকে প্রটেক্টিভ সার্কেল থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করে তাকে ভেতরে নিয়ে যেতে সক্ষম হলো তারা। 

বার্ড হান্টার বাড়ীর পাশেই একটি গাছে বসে ছিলো। 
সে উড়ে এসে সাইরিন বেগম আর শ্রেয়ার চোখে তার থুতু ছিটিয়ে দিলো।  
অতঃপর তারা দেখতে পেলো হাজারো গবলিন চারপাশে ঘুরাঘুরি করছে।
এত ভয়ংকর দেখতে মনে হচ্ছে এই বুঝি তারা প্রটেক্টিভ সার্কেল ভেদ করে ভেতরে এসে পড়বে।

সবাই বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করলো।  
রেটলিন আর সৌরভ সবার সামনে আসলো। 

রেটলিন শাহীনকে দেখা মাত্র রাগান্বিত স্বরে বলতে লাগলো, "তুমি আমায় ধোঁকা দিয়েছো? ভুয়া ম্যাজিক বুক রেখে আসলটা নিয়ে গিয়েছ। "

"কুল ডাউন মিষ্টার রেটলিন, আমি শুধুমাত্র সাইরিন বেগমকে দেখানোর জন্য নিয়েছিলাম। 
এখন বলেন কিভাবে গবলিনদের ধ্বংস করা যায়? ম্যাজিক বুকের কোথাও তো এই সম্বন্ধে লেখা নেই।" শাহীন জানতে চাইলো।  

"এর সমাধান একমাত্র আমার মাস্টারের কাছে রয়েছে। আমি কিছুই জানি না।" 

শাহীন ভাবতে লাগলো, সাইরিনের ভাষ্যমতে স্যামুয়েল উইজ মারা যাননি। তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাহলে কি সে এখনো জীবন্ত নাকি মৃত? 
বইয়ে উল্লেখিত ব্রিফিন নামক পাখির দ্বারা তো সেখানে যাওয়ায় যায়। যেখানে স্যামুয়েল উইজ কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।  

সে ম্যাজিক বুক বের করে ব্রিফিন কে নিয়ে আসার মন্ত্র পড়ে ফেললো। 
সবাই অবাক চোখে তার কর্মকাণ্ড দেখে যাচ্ছে।  

হঠাৎ বাড়ীর পিছে বিশাল এক পাখি ডানা ঝাপটাতে লাগলো।  
বার্ড হান্টার এত বড় পাখি দেখে অবাক। 
সে মনে মনে ভাবছে,"ইশ! এটাকে যদি খেতে পারতাম। তাহলে তৃপ্তি পেতাম! 

পাখি টা সবার সামনে এসে বসে পড়লো। 
 পাখির উপরে  উঠে বসলো শাহীন। 
 তারপর সৌরভ বসলো। 

 "আর কেউ কি যাওয়ার জন্য আগ্রহী আছো?" শাহীন জানতে চাইলো। 

অতঃপর শ্রেয়াও সবার পিছে বসে পড়লো। 
ব্রিফিন বার্ড উপরে উঠে গেলো। 
মেঘের খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। 
শাহীন শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে বললো, "আপনি এই ঝামেলায় জড়াতে গেলেন কেনো? হয়তো এখানে আপনার প্রাণ ও যেতে পারে। তাছাড়া আপনি তো মেয়ে মানুষ। "

"অ্যাডভেঞ্চার আমার খুব ভালো লাগে। 
আর এত সুন্দর সুযোগ হাত ছাড়া করার কোনো ইচ্ছে নেই। তাই কাজে লাগিয়ে নিলাম। আর হ্যাঁ মেয়ে বলে ভেবেন না ভয় পাবো। আপনাদের চেয়ে আমার শক্তি বেশিই হবে।" শ্রেয়া বলল।

"তাই নাকি? বিপদেই শক্তির প্রমাণ পাওয়া যাবে।" 

ব্রিফিন একটি বরফ রাজ্যের সামনে চলে আসলো।  
উঁচু উঁচু বরফের চূড়ার মাঝ দিয়ে যেতে লাগলো।  
শীতে সবার হাড় হিম হয়ে গেলো। 
মনে হচ্ছে এই বুঝি ব্রিফিনের পিঠ থেকে তাদের শরীর বরফ হয়ে নীচে পড়ে যাবে। 
কয়েক মুহূর্ত পর তারা বরফ রাজ্য অতিক্রম করলো। 

"শ্রেয়া, আপনি কি আছেন নাকি বরফে জমে গেছেন?" শাহীন বললো। 

"হ্যালো মিস্টার, আমাকে বরফে জমানো এত সহজ নয়। "

হঠাৎ ব্রিফিন এক অন্যরকম জগতের মতো স্থানে নেমে পড়লো। 
চারদিকে সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি। সেই সাথে প্রকৃতি থেকে, কেমন যেনো ছন্দ ভেসে আসছে।
সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। 

সবাই খেয়াল করলো একজন বুড়ো লোক লাঠি হাতে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। 

শাহীন ডাকল, "হেই, প্লিজ লুক ব্যাক। আর ইউ স্যামুয়েল উইজ?"

সাথে সাথেই লোকটি পিছু ফিরে তাকালো। 
শ্রেয়া দৌড়ে তার কাছে গেলো। 
আর বলতে লাগলো, "নানু কেমন আছো?"

"নানু?  আমার মেয়েই তো এখনো ছোট্ট। তার তো বিয়েই হয়নি। সকালেই তো তার সাথে কথা বলে আসলাম।"

"আপনি বুঝতে পারছেন না, আপনার একদিন মনে হচ্ছে। কিন্তু পুরো পঁয়ষট্টি বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।"

"ওহ মাই গড! কিভাবে হলো এসব?" স্যামুয়েল উইজ বললেন। 

"এসব কিছু হয়েছে আপনার লেখা সেই ম্যাজিক বুকের জন্য। এই দেখুন সেই বুক।" শাহীন বললো। 

"এই বুক? এখানে বের করোনা। লুকিয়ে ফেলো। তারা চলে আসবে। তারপর বুকটি নিয়ে নিবে।" স্যামুয়েল উইজ বললেন। 

"কে আসবে এখানে? গবলিনরা তো অনেকদূরে। এখানে আবার কে আসবে?" উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে শাহীন জানতে চাইলো। 
চলবে....

অনেকদিন পর দিলাম। 
সেই জন্য দুঃখিত। 

লেখাঃ Shourav Islam Shahin (গল্প কথক)