গল্পঃ #ম্যাজিক_বুক
#ষষ্ঠ_পর্ব

"আপনি কার কথা বলছেন? কে এসে পড়বে?" শাহীন বললো।

"শয়তানের উপাসক। যে দীর্ঘদিন ধরে আমাকে এখানে বন্দী করে রেখেছে।" স্যামুয়েল উইজ বললেন।

"সে কেনো আপনাকে বন্দী করে রেখেছে?আর কে সে?"

স্যামুয়েল উইজ বলতে লাগলেন, "আমি বিভিন্ন স্থানে গিয়ে জাদুর উপকরণ সংগ্রহ করতাম। তারপর সেগুলোকে ম্যাজিক বুকে লিপিবদ্ধ করতাম।
তেমনই একদিন ভুল করে, এক পাহাড়ের মাঝে চলে যায়। আর সেখানে একটি গুহা দেখতে পাই। সেই গুহার মাঝে একটি বুক পেয়ে যাই।
যেটার নাম সোলেমানি জাদুর কিতাব। যার ভিতরে অসংখ্য জাদুর জায়গা আর উপকরণ এর নিদর্শন ছিলো।
সোলেমানি জাদুর কিতাব দেখে আমি বিভিন্ন জায়গায় যাই। অতঃপর অনেক জাদু এবং মন্ত্র ম্যাজিক বুকে লিপিবদ্ধ করি।
যার ফলে শয়তানের বাদশা চেরোফেন আমার পিছু লাগে।
গবলিনদের লেলিয়ে দেয় আমার ম্যাজিক বুক নেওয়ার জন্য।
আর আমাকে উঠিয়ে নিয়ে আসে এই রাজ্যে।"

"আপনি এখান থেকে ফিরে যাচ্ছেন না কেনো নানু? শ্রেয়া বললো।

"এখান থেকে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।
কিছুক্ষণ আগে একটি ছন্দ শুনতে পেয়েছিলে তোমরা? "

"হ্যাঁ, শুনেছি।"

"সেটা যদি এক ধ্যানে শোনো, তাহলে কিভাবে সময় চলে যাবে,বুঝতেই পারবে না।গোলকধাঁধায় আটকে যাবে তুমি।"

"তাহলে আমাদের উপায় কি? কিভাবে এসব অপয়া কালো শক্তির সাথে মোকাবিলা করতে পারি?" শাহীন জানতে চাইলো।

"আমাদের প্রথমে যেতে হবে 'দ্য সিটি অফ ম্যাজিক' শহরে। যেখানে জাদুবিদ্যার চর্চা করা হয়।
সেই শহরে তিনটি উঁচু টাওয়ারের মতো পাহাড় রয়েছে।
মাঝের পাহাড়টা সবচেয়ে বেশি উঁচু। যেটার ভেতরে জাদু বিদ্যার রাজা,শয়তানের উপাসক চেরোফেন এর প্রাসাদ।
আমাদের সেখানে যেতে হবে, তাদের মতো ছদ্মবেশ নিয়ে।
তারপর সোলেমানি কিতাব এর সাহায্যে সেই রাজ্য আর রাজপ্রাসাদ ধ্বংস করতে হবে।
তোমরা কি প্রস্তুত এই যুদ্ধের জন্যে?" জানতে চাইলেন স্যামুয়েল উইজ।

"হ্যাঁ আমরা প্রস্তুত শয়তানি শক্তির সাথে মোকাবিলার জন্য। আপনি আমাদের দিকনির্দেশনা দিন।" সবাই এক বাক্যে জবাব দিলো।

"প্রথমে আমাদের সোলেমানি জাদুর কিতাব সংগ্রহ করতে হবে। তারপর সেই 'দ্য সিটি অফ ম্যাজিক' শহরে যেতে হবে।" স্যামুয়েল উইজ বললেন।


"তার মানে? সেই কিতাব আপনার কাছে নেই?" সৌরভ জিজ্ঞেস করলো।

"না, নেই। তবে আমি জানি সেটা কোথায় রাখা আছে। জায়গাটা বেশ ভয়ংকর। অনেকটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।" স্যামুয়েল উইজ বললেন।

"নো প্রব্লেম। আমাদের তাতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা সেটি সংগ্রহ করতে পারবো।" শাহীন বললো।

এমন সময়,
এক ধরনের মুগ্ধকর ছন্দ বাজতে আরম্ভ করলো।
স্যামুয়েল উইজ সবাইকে কান চেপে ধরতে বললেন।
যদি তারা এই শব্দ শুনে তাহলে তাদের মস্তিষ্ক তাদের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাবে।

কিছুক্ষণ পর ছন্দ থেমে গেলো।

"শুনো, আমাদের এই নকশা অনুযায়ী যেতে হবে।" বলেই একটি নকশা সকলের সামনে মেলে ধরলেন তিনি।

নকশার ভেতরে একটি বিশাল নদী রয়েছে। যেটা পার হওয়া অনেক কঠিন।
চিত্র অনুযায়ী সেই নদীতে কুমির এবং বিভিন্ন জলজ প্রাণী রয়েছে।
তারপরের জায়গাটা আরও ভয়ংকর। একটি সরু সাঁকো রয়েছে। যার নিচে উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরি টগবগিয়ে উপরের দিকে আসছে।

সব শেষে পিরামিড আকৃতির একটি পাহাড় রয়েছে।
যেটি সোলাইমান (আঃ) এর আমলে তৈরি করা হয়েছিলো।
সেই পাহাড়ের ভেতরে প্রবেশ করলেই সুলেমানি জাদুর কিতাব পাওয়া যাবে।

সবাই মনোযোগ সহকারে নকশাটি দেখল।

"তাহলে,আর দেরি না করে এখনই অভিযান শুরু করা যাক, নানুভাই।" স্যামুয়েল উইজ কে বললেন শ্রেয়া।

"চলো তাহলে। আর একটি ব্যাপার, শাহীন আর সৌরভ তোমাদের দুজনকে আলাদা করা অনেক জটিল। দয়াকরে আলাদা ড্রেস পড়ো নয়তো ঝামেলা বেঁধে যাবে।" স্যামুয়েল উইজ স্মিত হেসে বললেন।

সবাই ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলো নকশা অনুযায়ী।

"সৌরভ আর শাহীন, ভবিষ্যতে বিয়ের পর।  তোমাদের বউ কনফিউজ হয়ে যাবে তাদের স্বামীকে সনাক্ত করতে গিয়ে।" হেসে হেসে বললো শ্রেয়া।

"নাইস জোক! বাট তুমি তো কনফিউজড হও নি আমাদের আলাদা করতে।" বাকা স্বরে বললো শাহীন।

"সো হোয়াট?  তাই বলে কি আমি তোমাদের কারো বউ হবো? নেভার।" রেগে বললো শ্রেয়া।

শাহীন শান্ত গলায় বলতে লাগলো, "কুল ডাউন মিস শ্রেয়া। আমি কিন্তু বউ হতে বলিনি?"

"দেখো, আমাকে ভেবোনা একা। সাথে কিন্তু আমার নানু রয়েছে। "

"বাহ! মচৎকার। কে তোমার নানুর সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিলো? সেটা কি ভুলে গেছো? যাইহোক তুমি আর তোমার নানু।
আমি আর আমার ভাই, চলো কাবাডি খেলি।" হেসে বললো শাহীন।

"চুপ করবে তোমরা? এটা কি মজার সময়?

চারদিকে বিপদ ওঁৎ পেতে আছে। আর তোমরা আছো ফাজলামো নিয়ে।" ধমক দিয়ে বললেন স্যামুয়েল উইজ।

হাঁটতে হাঁটতে তারা নদীর কাছে চলে আসলো। নদীটি অনেক চওড়া।
পার হওয়া অনেক কষ্টসাধ্য।

স্যামুয়েল উইজ সবার উদ্দেশ্যে বললেন, "একটি আইডিয়া দিতে। যে কিভাবে নদী পার হওয়া যায়?

" আমার কাছে একটি আইডিয়া রয়েছে।" শাহীন বললো।

"কি আইডিয়া? " স্যামুয়েল উইজ জানতে চাইলেন।

"আমি শ্রেয়ার সাথে প্রেম করি। তারপর নদীতে নামি। কারণ আমি শুনেছি প্রেমের মরা জলে ডুবে না।" উচ্চস্বরে হেসে বলল শাহীন।

শ্রেয়া রাগে কটমট করে তাকালো তার দিকে।

স্যামুয়েল উইজ রেগে বললেন, "এটা মোটেও মজা করার সময় নয়।"

তারপর স্যামুয়েল উইজ এর আদেশে সবাই পাশের বন থেকে কিছু গাছ কাটলো।
অতঃপর সেগুলোকে বেঁধে ভেলা বানিয়ে ফেললো।
একটি লম্বা সরু গাছ নিলো বৈঠা দেওয়ার জন্য।

সবাই ভেলায় চড়ে বসলো।
তারপর সৌরভ সেই সরু গাছটি নিয়ে বৈঠা মারতে লাগলো।

"সবাই সাবধানে থাকো। নদীর ঢেউয়ে ছিটকে পড়ে যেতে পারো।" স্যামুয়েল উইজ বললেন।

"এই শ্রেয়া, এদিকে আসো। আমায় ধরে বসো। নাহয় নদীতে পড়ে যাবে।" শাহীন বললো।

"হ্যালো মিস্টার! আপনাকে কেনো ধরতে যাবো?  আমার নানু ভাই আছে, তাকে ধরেই যেতে পারবো।" ভেংচি কেটে বললো শ্রেয়া।

মনে মনে শাহীন বলতে লাগলো, " নানু ভাই তো নিজেই বুড়ো। ঢেউয়ের আঘাতে কখন না বুড়োর পিন্ডি চটকে যায়।"

তারা গাছের তৈরি ভেলা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ একটি কুমির ভেলায় এসে ধাক্কা দিলো।
সবাই ভয়ে হকচকিয়ে গেলো।

স্যামুয়েল উইজ বললেন, "তোমরা শক্ত করে ভেলা ধরে রাখো। আর সৌরভ হাতের লাঠি দিয়ে কুমিরের গায়ে আঘাত করো। "

আঘাত করা মাত্রই কুমির চলে গেলো।
এক পর্যায়ে তারা নদীর কিনারায় চলে আসলো।
তারপর সবাই ভেলা থেকে নেমে গেলো।

সবাই জঙ্গলের মাঝ দিয়ে হাঁটছে।
হঠাৎ সৌরভ জুড়ে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।

সবাই তার কাছে গেলো। দেখলো পায়ের ভিতর ছিদ্র হয়ে গেছে। বুঝতে বাকি রইলো না যে সাপে কেটেছে।
তড়িঘড়ি করে শাহীন নিজের শার্ট ছিঁড়ে সৌরভের পায়ে বেঁধে দিলো।

তারপরও সৌরভের শরীর নীলচে হয়ে গেলো। আর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।

শাহীন কেঁদে কেঁদে স্যামুয়েল উইজ কে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে বললেন।

"ভয় পেয়ো না শাহীন। জীবনে চলার পথে অসংখ্য বাঁধা বিপত্তি আসবে। তোমার প্রিয়জনরাও বাঁধার সম্মুখীন হবে। এরকম অনেক কাল সাপ রয়েছে।  যারা পদে পদে আমাদের কে বিপদগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তুমি একদম ভেঙ্গে পড়ো না।" স্যামুয়েল উইজ বলেই কিছু উদ্ভিদ জাতীয় গাছ কুড়িয়ে এনে তারপর সেগুলো কে বেটে সৌরভের ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলো।

তারপরও সৌরভের জ্ঞান ফিরলো না।
সন্ধ্যা ছেঁয়ে গেলো চারদিকে।
তারা একটি তাবু টানিয়ে বাহিরে আগুন জ্বালিয়ে বসে পড়লো।
অচেনা জঙ্গল। চারদিকে হাজারো তক্ষক ডেকে ওঠছে।
তারা জানে না কি বিপদ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
তবে এটা নিশ্চিত চারজনের সবাই বেঁচে ফিরবে না। হয়তো সবাই মারা পড়তে পারে।
তবুও তারা চেষ্টায় আছে অসাধ্য সাধন করার জন্য।

সৌরভের জ্ঞান না ফেরায় সবাই খুব চিন্তিত।
হঠাৎ তাদের জ্বালানো আগুন নিভে গেলো।
ঝোপের আড়ালে কি যেনো ডেকে উঠলো।
শ্রেয়া ভয়ে স্যামুয়েল উইজ এর পিছনে লুকিয়ে গেলো।
হঠাৎ একটি গাছ আছড়ে পড়লো তাদের পাশেই।

চলবে...

কি হতে পারে নতুন বিপদ? সৌরভ কি বেঁচে ওঠবে?

লেখাঃ Shourav Islam Shahin ( গল্প কথক)